সরকারি অফিসারেরা সালিশি সভা বসিয়েছেন জেনে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট তুলোধোনা করল রাজ্যকে।
ধান কাটা নিয়ে একটি মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক সরকারি কৌঁসুলির কাছে ওই প্রশ্নের সদুত্তর না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি অফিসারদের এই ধরনের সালিশি সভা বসানোর কোনও এক্তিয়ার রয়েছে কি না জানতে চাই। সঠিক ব্যাখ্যা না পেলে ওই অফিসারদের বেতন থেকে টাকা কেটে মামলার আবেদনকারীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ভাবব।’’
বিচারপতি এ দিন বলেন, ‘‘এই ধরনের বিচারের কথা জানতে পেরে আদালত হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না।’’ ওই বিচারসভা নিয়ে রাজ্য ও মামলায় অভিযুক্তদের তিন সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা পেশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
হাইকোর্টের আইনজীবী নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, তাঁর মক্কেল হাওড়ার বাসিন্দা যামিনী দাস ও তাঁর ভাইদের পৈতৃক তিন একর জমি রয়েছে আমতা ১ নম্বর প়ঞ্চায়েত সমিতির সোমেশ্বর মৌজায়। ওই জমিতে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে স্থানীয় একই পরিবারের জনা পাঁচেক সদস্য চাষ করেন। ওই জমিতে বর্গাদার হিসেবে নথিভুক্ত হওয়ার জন্য তাঁরা আমতা-১ ব্লকের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিকের (বিএলএলআরও) কার্যালয়ে আবেদন করেছেন। সেই আবেদনের শুনানি বাকি রয়েছে। ইতিমধ্যে গত ১৫ ডিসেম্বর ওই বিএলএলআরও যামিনীবাবুর মোবাইলে এসএমএস করে জানান, ১৯ ডিসেম্বর তাঁকে কার্যালয়ে হাজির থাকতে হবে। যামিনীবাবু ওই দিন সেখানে গেলে তাঁকে বলা হয় আমতা-১ এর বিডিও, বিএলএলআরও, আমতা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, ওই সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ এবং আমতা থানার ওসি-কে নিয়ে পাঁচ জনের কমিটি গড়া হয়েছে। ওই কমিটি ঠিক করবে যামিনীবাবুদের জমির ধান চাষিরা পাবেন কি না।
নীলাঞ্জনবাবু জানান, তাঁর মক্কেলের অভিযোগ, ১৯ ডিসেম্বর কমিটি একটি প্রস্তাব নেয়। তাতে ঠিক হয়, যে ব্যক্তিরা চাষ করেছেন, তাঁরা পুলিশের উপস্থিতিতে ২২ ডিসেম্বর জমির ধান কেটে নিয়ে নেবেন। যামিনীবাবুকে দিয়ে প্রস্তাবে সইও করানো হয় বলে অভিযোগ। জমির বর্গাদার ঠিক হওয়া নিয়ে যখন আবেদনের শুনানি বাকি, তখন ওই কমিটি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না সেই প্রশ্ন তুলে ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে জানুয়ারি মাসে মামলা দায়ের করেন যামিনীবাবুরা।
এ দিন মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে সরকারি কৌঁসুলি সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কমিটির বৈধতা রয়েছে কি না তা জানতে চান বিচারপতি। সরকারি কৌঁসুলি জানান, যামিনীবাবু নিজের ইচ্ছায় কমিটির প্রস্তাবে সই করেছেন। সেই মতো ধান কাটা হয়েছে। সেই উত্তরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি ওই মন্তব্য করেন।