বড় একটি ডিসপ্লে বোর্ড। পাশে একটি ছোট্ট সুইচ। পাশে থাকা হেডফোন কানে লাগিয়ে সুইচ টিপলেই ডিসপ্লে বোর্ডে ফুটে উঠবে একটি নৌকা। হেডফোনে ঝরঝরে বাংলায় শোনা যাবে সেই নৌকার ইতিবৃত্ত। আটশো বছরের প্রাচীন ইতিহাস এবং নৌকা তৈরির কৌশলের কাহিনী শোনাতে হাওড়ার জেলা গ্রন্থাগারে তৈরি হতে চলেছে মিউজিয়াম। অডিও-ভিস্যুয়ালের অত্যাধুনিক এই ‘বোট মিউজিয়াম’। রাজ্য গ্রন্থাগার দফতর সূত্রের খবর, ৬৯ লক্ষ টাকা খরচে তৈরি হতে চলেছে এই মিউজিয়াম।
প্রাচীন ভারতে জলপথের গুরুত্বই ছিল বেশি। বাণিজ্য হোক বা মাছ ধরা, বিনোদন হোক বা যাত্রী পরিবহণ সবেতেই নৌকার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। সেই মতো বিভিন্ন রাজ্যে নৌকার রকমভেদও ছিল। বর্তমানে রেল পথ, সড়ক পথ এবং আকাশ পথের কারণে জলপথ পরিবহণের গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে কমেছে। তবে মাছ ধরতে গেলে আজও নৌকার গুরুত্বই সব থেকে বেশি। তবু অজানা থেকে গিয়েছে নৌকার ইতিহাস। সেই ইতিহাসকে সকলের সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ বলে জানান হাওড়ার স্থানীয় গ্রন্থাগার কমিটির সদস্য নিশীথ সরকার।
বাংলার নৌ-গবেষক স্বরূপ ভট্টাচার্য জানান, প্রায় আটশো বছর আগে থেকে দীঘা এবং উপকূল অঞ্চলে ব়ড় আকারের নৌকা চলত। সুইডেন, ডেনমার্কে তখন যে প্রযুক্তির নৌকা চলত এ রাজ্যের প্রযুক্তি তার থেকে ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। এবং পরবর্তী কালে এখানকার প্রযুক্তি টিকে থাকলেও ডেনমার্ক এবং সুইডেনের প্রযুক্তি বেশি বছর চলতে পারেনি বলে জানান স্বরূপবাবু। এক সময়ে হাওড়ার ঘুষুড়িতে এ রাজ্যের নৌকা তৈরি হত। সময়ের সঙ্গে সেই ইতিহাসও ম্লান হয়ে গিয়েছে। তবে নৌকার কার্যকারিতা এখনও সমান ভাবে বজায় রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ-সহ এ রাজ্যের একাধিক জেলায়।
স্বরূপবাবু জানান, এখনও সুন্দরবন এলাকার মানুষের মাছ ধরাই প্রধান জীবিকা। সে কাজে গঙ্গা এবং সমুদ্রে যেতে হয় তাঁদের। নদী বা সমুদ্রের কোথায় কত জল এবং ঢেউয়ের বহরের উপরে নির্ভর করে নৌকার আকৃতি। নতুন সেই সব প্রযুক্তিও থাকবে এই মিউজিয়ামে। গ্রন্থাগার দফতরের এক কর্তা জানান, হাওড়ার জেলা গ্রন্থাগারের উপরে তৈরি হচ্ছে এই মিউজিয়াম।
রাজ্য জুড়ে গ্রন্থাগারগুলি ধুঁকছে। এ বার তাই গ্রন্থাগারের চরিত্র পরিবর্তন করতে শুরু করেছে দফতর। বিনামূল্যে সহায়ক বই বিতরণ, ডিজিটাইজড গ্রন্থাগার, মাঠে গিয়ে চাষের পাঠ দেওয়া, চাকরির দিশা দেখানোর পরে এ বারে মিউজিয়াম তৈরির পরিকল্পনা।
বর্তমানে কাঁকুড়গাছিতে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের একটি বোট মিউজিয়াম আছে। সেখানে দেশের মোট ৪৬টি নৌকার নমুনা রয়েছে। সেগুলি কত সাল থেকে চলাচল শুরু করেছে এবং কার্যকারিতা কী, সে সম্পর্কে লেখা রয়েছে এক লাইনে।
এখানেই হাওড়া গ্রন্থাগারে বোট মিউজিয়াম কিছুটা অন্য রকম। সেখানে এক একটি নৌকার ইতিহাসের অডিও ভিস্যুয়াল প্রদর্শন রাজ্যে অভিনব বলেই জানান গ্রন্থাগার দফতরের এক কর্তা। রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, ‘‘সম্প্রতি ১৩টি জেলায় সমীক্ষা চালানো হয়েছে। তার পরেই হাওড়ার এই বোট মিউজিয়াম তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।’’