অভিযোগ: তদন্তকারীদের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ। ছবি: সুব্রত জানা
তদন্তের জন্য রবিবার হাওড়ার জয়পুরের সেই হোমে গিয়ে আবাসিকদের বিক্ষোভের মুখে পড়ল সিআইডি এবং পুলিশ। চার আবাসিক প্রতিবন্ধী কিশোরী যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তোলায় শুক্রবার রাতে হোমের তিন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
সেই ঘটনার তদন্তেই রবিবার দুপুরে জয়পুরের পারবাকসির ওই বেসরকারি হোমে যায় সিআইডি-র একটি দল। সঙ্গে ছিলেন এই মামলার তদন্তকারী অফিসার তথা উলুবেড়িয়া মহিলা থানার ওসি মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জয়পুর থানার পুলিশ। ঢোকার সময়েই ওই বিক্ষোভে তদন্তকারীরা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন দাবি করে, অভিযোগ মিথ্যা। তবে কয়েকজন ইশারাতেও একই দাবি করে বলে অনুমান পুলিশের। হোমের আবাসিকদের একাংশ এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে, হোমের রেজিস্ট্রার এবং অভিযোগকারী চার জনের মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে দলটি ফেরার সময়েও বিক্ষোভ হয়। সিআইডি অফিসারদের গাড়িও আটকানো হয়।
সিআইডি অফিসার স্বপ্না ঘোষ বলেন, ‘‘এডিজি সিআইডি-র নির্দেশেই তদন্তে এসেছি। সব রিপোর্ট এবং যা দেখলাম তাঁকে জানাব।’’ বিক্ষোভের প্রসঙ্গে হোমের সুপার সুকেশ দাস বলেন, ‘‘আবাসিকদের খুব কাছের মানুষ ছিলেন ধৃতেরা। তাই ওরা বিক্ষোভ দেখিয়েছে। আমাদেরও মনে হচ্ছে কোথাও কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ঠিক নয়।’’
দিনকয়েক আগে হোমটিতে যান জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক। চার আবাসিক ওই আধিকারিকের কাছে হোমের তিন জনের বিরুদ্ধে তাদের উপরে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তোলেন। এরপরে জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করায় শুক্রবার রাতে হোমের কর্মী প্রতাপ প্রামাণিক, কেয়ারটেকার ফণীমোহন বাগ এবং গাড়ি-চালক বাবলু ধাড়াকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার পরীক্ষা এবং উলুবেড়িয়া আদালতে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার পরে ওই চার আবাসিককে লিলুয়া হোমে পাঠায় পুলিশ।
সিআইডি-র একটি সূত্রের খবর, এ দিন কয়েকজন আবাসিকের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা ধৃতদের অতীত আচরণ জানতে চেষ্টা করেন। ওই চার আবাসিকের গত এক বছরের মেডিক্যাল রিপোর্টও সংগ্রহ করা হয়। যাতে অভিযোগ করার সময়ে তাঁদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা কী ছিল তার আঁচ মেলে। রিপোর্টগুলি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হবে। আবাসিক ১৯০ জন কিশোরীর তালিকা সংবলিত হোমের রেজিস্ট্রারটি পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নেয়।
পুলিশ ও সিআইডি সূত্রের খবর, হোম থেকে আবাসিক পালিয়ে যাওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। বছর দুই আগে যৌথ ভাবে হোম পরিদর্শনে গিয়েছিলেন হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ এবং আমতা-২ ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। আবাসিকেরা পালিয়ে গিয়ে অনেকেই আর ফিরে আসে না বলে রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরে তাঁরা রিপোর্ট দিয়েছিলেন। সিআইডি এবং পুলিশ এ দিন জানায়, কতজন আবাসিক হোমে থাকে, কতজন পালিয়ে গিয়েছে, কতজন ফিরে এসেছে— এ সব তথ্য জানতেই রেজিষ্ট্রারটি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।