ঠাকুর দেখা নিয়ে বায়না, বধূকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ শ্যামপুরে

স্বামীর সঙ্গে কালীপুজোর ঠাকুর দেখতে যেতে চেয়েছিলেন বছর একুশের তরুণী। শ্বশুরবাড়ির লোকের তাতে সায় ছিল না। সোমবার রাতে এই নিয়ে শুরু হয় ঝগড়াঝাটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্যামপুর শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৯
Share:

স্বামীর সঙ্গে কালীপুজোর ঠাকুর দেখতে যেতে চেয়েছিলেন বছর একুশের তরুণী। শ্বশুরবাড়ির লোকের তাতে সায় ছিল না। সোমবার রাতে এই নিয়ে শুরু হয় ঝগড়াঝাটি। ঘরের সেই উত্তপ্ত পরিবেশে আর ঠাকুর দেখতে যাওয়া হয়নি সর্বাণী মাইতির। বরং অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ঠাঁই হয় হাসপাতালের বিছানায়। শেষ রক্ষা অবশ্য হয়নি। মঙ্গলবার সকালে মেডিক্যাল কলেজে মারা গিয়েছেন ওই বধূ। তাঁকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজনই আগুন জ্বেলে দিয়েছিল বলে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দিয়ে গিয়েছেন সর্বাণী। স্বামী তপন মাইতি এবং শ্বশুর-শাশুড়ি-ননদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

সর্বাণীর শ্বশুরবাড়ি হাওড়ার শ্যামপুরের ডিহিমণ্ডলঘাটে। এই জেলারই আর এক প্রান্ত ফুলেশ্বরের তরুণী মিতা মণ্ডলকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে তাঁর স্বামী, শ্বশুরবা়ড়ির লোকজন। যাদবপুরের প্রাক্তনী মিতা নবমীর রাতে স্বামী রানার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যেতে চেয়েছিলেন। যা থেকে গোলমালের সূত্রপাত। পর দিন ভোরে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মিতাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

হাওড়ারই কমলপুরের বাসিন্দা সর্বাণীর বিয়ে হয়েছিল বছর তিনেক আগে। স্বামী তপন কলকাতার একটি কারখানার কর্মী। নিঃসন্তান থাকায় নিয়মিত গঞ্জনা শুনতে হতো সর্বাণীকে, এমনই অভিযোগ তাঁর বাপের বাড়ির লোকজনের। দিন দিন পরিস্থিতি তিক্ত হচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে বৌমার ঠাকুর দেখতে যাওয়ার বায়না অসহ্য ঠেকেছিল শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধ্যায় এলাকার লোকজন সর্বাণীদের বাড়িতে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে ছুটে আসেন। দেখা যায়, রান্নাঘরে জ্বলন্ত অবস্থায় ছটফট করছেন ওই তরুণী। খবর যায় শ্যামপুর থানায়। পুলিশ এসে প্রতিবেশীদের সাহায্যে সর্বাণীকে উদ্ধার করে কমলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠায়। পরে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতাল হয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মঙ্গলবার সেখানেই মারা যান সর্বাণী।

সোমবারের ঘটনায় সামান্য অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল তপন। পুলিশ ও প্রতিবেশীরা ধরে নেন, স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়েই এই অবস্থা হয়েছে তার। কিন্তু হাসপাতালে সর্বাণীর মৃত্যুকালীন জবানবন্দি ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

পুলিশ জানায়, সর্বাণী জানিয়ে গিয়েছেন, সোমবার তিনি স্বামীর সঙ্গে পুজো দেখতে বেরোচ্ছিলেন। পরিবারের লোকজন বারণ করায় ঝামেলা বাধে। রাতের দিকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে টেনে-হিঁচড়ে রান্নাঘরে নিয়ে যায়। সেখানে গ্যাস ওভেন জ্বালিয়ে তাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে। তাকে পোড়াতে গিয়েই অগ্নিদগ্ধ হয় তপন, জানিয়ে গিয়েছেন সর্বাণী। এই জবানবন্দির ভিত্তিতেই পরে গ্রেফতার করা হয় তপনকে। মঙ্গলবার ধরা পড়ে বাকিরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন