রান্নার গ্যাস ভরা হচ্ছে অটোয়।—নিজস্ব চিত্র।
ওজন মাপার যন্ত্রে উল্টো করে বসানো রান্নার গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার। ওজন মেপে পাম্পের সাহায্যে গ্যাস বের করে ভরে দেওয়া হচ্ছে অটোরিকশায়। কতটা গ্যাস ভরা হচ্ছে তার হিসাব রাখছে ওজন মাপার যন্ত্র। এ ভাবেই বেআইনি ভাবে রান্নার গ্যাসে বহু অটো চলছে হুগলি জেলার নানা প্রান্তে। রান্নার গ্যাস নিয়ে বেআইনি কারবার অবশ্য শুধু অটোতেই থেমে নেই। স্কুলের অনেক পুলকারেও এ ভাবে গ্যাস ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। অনেক রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুড, চায়ের দোকানেও নিয়মমতো কমার্শিয়াল সিলিন্ডার ব্যবহারের বদলে ডোমেস্টিক সিলিন্ডার দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।
রান্নার গ্যাসের একটা বড় অংশ যে অটো বা অন্য গাড়িতে ভরা হয়, এমন অভিযোগ নতুন নয়। দেখা গিয়েছে, বহু জায়গায় বাড়ির ভিতরেই অত্যন্ত বিপজ্জনক ভাবে গাড়িতে রান্নার গ্যাস ভরার ব্যবস্থা থাকে। গত কয়েক বছরে শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, চুঁচুড়ার নানা জায়গায় হানা দিয়ে এমন কিছু ডেরার হদিসও পায় পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয় প্রচুর সিলিন্ডার। আটক করা হয় অটো। ধরপাকড়ও হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও জেলা জুড়ে রান্নার গ্যাসের বেআইনি কারবার ঠেকানো যায়নি।
কেন তাঁরা নির্দিষ্ট গ্যাসের বদলে রান্নার গ্যাস ব্যবহার করেন সেই প্রশ্নে অটোচালকদের যুক্তি, হাইকোর্টের নির্দেশে দূষণ রোধে গ্যাসের অটো রাস্তায় নামলেও পর্যাপ্ত গ্যাস স্টেশন করা হয়নি। পান্ডুয়া, বলাগড়, মগরা, সিঙ্গুর, জাঙ্গিপাড়া, চণ্ডীতলা, হরিপাল-সহ নানা জায়গায় এই সমস্যা রয়েছে। ফলে, গ্যাস ভরতে অন্যত্র যেতে হয় অটোচালকদের। এতে তাঁদের খরচ বাড়ে। পান্ডুয়া, মহানাদ, বলাগড় প্রভৃতি জায়গার অটোচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁদের সবচেয়ে কাছের গ্যাস ভরার স্টেশন চন্দননগরে। ফলে এত দূরে গ্যাস ভরতে যাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এমন অসুবিধার জন্যই ঘুরপথে এই ব্যবস্থা চলছে।
পরিস্থিতির সুযোগে রান্নার গ্যাসের অসাধু ব্যবসায় জাঁকিয়ে বসেছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ‘ফিলিং স্টেশন’ (যেখানে রান্নার গ্যাস অটোয় ভরা হয়)। রান্নার গ্যাসের বেআইনি ব্যবহার কৃত্রিম অভাব তৈরি করছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। তাঁদের আরও অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময়ে গ্যাস বুক করেও যে সময়ে গ্যাস মেলে না, তার অন্যতম কারণও এটা। পুলিশ-প্রশাসনের উপযুক্ত নজরদারি না থাকাতেই এই অসাধু কারবারের রমরমা।
শুধু অটো বা পুলকারেই নয়, প্রশাসনের নজরদারির ফাঁক গলে বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁতেও কমার্শিয়াল সিলিন্ডারের পরিবর্তে ডোমেস্টিক সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে তারও নমুনা মিলেছে। তারকেশ্বর থেকে আরামবাগ, পান্ডুয়া থেকে চুঁচুড়া- সর্বত্রই দেখা গিয়েছে এমন ছবি। বহু দোকানে আবার প্রকাশ্যেই ডোমেস্টিক সিলিন্ডার রেখে ব্যবসা চলছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, রান্নার গ্যাসের এমন অনিয়ম রোখার দায়িত্ব মূলত জেলা এনফোর্সমেন্ট বিভাগের (ডিইবি)। কিন্তু তাদের পরিকাঠামোর যা হাল তাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা কঠিন। এ সবের জন্য না আছে পর্যাপ্ত দক্ষ কর্মী, না প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি। যদিও পুলিশের বক্তব্য, অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সমস্যা পুরোপুরি মেটা সম্ভব নয় তাও জানান তাঁরা।