রোশনাই: সোমবার রাতে গুপ্তিপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
তিল ধারণের জায়গা ছিল না রথ সড়ক ময়দানে। একের পর এক আতসবাজি রকমারি ফুলঝড়ি ছড়িয়ে দিচ্ছিল মাটি থেকে দূর আকাশে। সেই রঙের ছটায় উজ্জ্বল একের পর এক শোভাযাত্রা এগিয়ে আসছিল। প্রথমে দেবী বিন্ধ্যবাসিনী। তার পরে অন্যরা। প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষের ভিড়ে এ ভাবেই জগদ্ধাত্রী প্রতিমার ভাসান হল হুগলির গুপ্তিপাড়ায়।
বাংলায় বারোয়ারি পুজোর প্রচলন আড়াইশো বছর আগে। হুগলির এই জনপদেই। বারো ‘ইয়ার’ বা বন্ধু মিলে দেবী বিন্ধ্যবাসিনীর পুজো করেছিলেন। সেই থেকেই বারোয়ারি পুজোর প্রচলন। গুপ্তিপাড়ায় এখন কুড়িটিরও বেশি জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। এলাকার প্রবীণরা জানান, ভাসানে আতসবাজির আয়োজন বছর চল্লিশ ধরে। সেই সময় এত বৈদ্যুতিক আলোর চল ছিল না এলাকায়। বাজির আলোয় প্রতিমা এগিয়ে যেত নিরঞ্জনে। সেই ধারা চলে আসছে।
সোমবার রাতে রথ সড়ক ময়দানে বেশ কয়েকটি বাজির গাছ সাজানো হয়। রাত প্রায় সওয়া ৮টা থেকে সেগুলি পোড়ানো শুরু হয়। মোট ১০টি পুজো কমিটি শোভাযাত্রায় যোগ দিয়েছিল। দেবী বিন্ধ্যবাসিনীকে কাঁধে চাপিয়ে শোভাযাত্রা ময়দানে আনা হয়। তার পরে বাকি প্রতিমা পৌঁছয়। আক্ষরিক অর্থেই মেলা বসে গিয়েছিল। বাজি-পর্ব শেষে গঙ্গা-সহ বিভিন্ন ঘাটে বিসর্জন হয়।
আতসবাজি প্রদর্শন দেখতে হুগলির বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও বর্ধমানের একাংশ এবং নদিয়া থেকে গঙ্গা পেরিয়ে বহু মানুষ এসেছিলেন। হুগলি (গ্রামীণ) পুলিশের তরফে রথ সড়ক সংলগ্ন রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, ওই সংখ্যা ৫০ হাজার ছাপিয়ে গিয়েছিল। তবে, নামে আতসবাজি হলেও কিছুক্ষেত্রে বিকট আওয়াজে শব্দবাজি ফেটেছে। অথচ পাশেই গুপ্তিপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। শব্দবাজির বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কর্তাদের কাছে আপত্তি জানানো হয় পুলিশের তরফে। শব্দবাজি না ফাটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য নির্বিঘ্নেই ওই পর্ব মেটে। বাজির আগুন ছিটকে জনা পনেরো অল্পবিস্তর জখম হন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা করে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় এক প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘গুপ্তিপাড়াকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। আতসবাজির মতো উৎসবকে কী ভাবে আরও আকর্ষণীয় করা যায় এবং শব্দবাজি যাতে না ফাটে, সেই চেষ্টা করা উচিত।’’