Jamaishasthi

করোনা-আমপানের জোড়া ধাক্কা জামাইষষ্ঠীর বাজারে

লকডাউনে ট্রেন-বাস চলছে না। তাই গিন্নির হাত ধরে জামাইয়ের শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথ কার্যত বন্ধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২০ ০৫:২৬
Share:

ক্রেতার ভিড় নেই ফলের দোকানে। বুধবার গোঘাটের কামারপুকুর চটিতে।

জামাই বাবাজীবনের জন্য বেছে বেছে ইলিশ নেওয়া চাই। পছন্দসই হিমসাগর, মুজফ্ফরপুরের লিচু বা মাটির হাঁড়িতে রসে টইটম্বুর প্রমাণ সাইজের মিষ্টিও নিজের হাতেই কিনতে হবে। তাই বছরকার এই দিনটায় ঘরকুনো শাশুড়িরও দেখা মেলে বাজারে।

Advertisement

কিন্তু এ বার উলটপুরাণ! আজ, বৃহস্পতিবার জামাইষষ্ঠী। তার আগের দিন অর্থাৎ বুধবার হুগলির বাজারে পসরা সাজিয়ে দোকানি হাজির। কিন্তু শ্বশুর-শাশুড়ির দেখা নেই।

লকডাউনে ট্রেন-বাস চলছে না। তাই গিন্নির হাত ধরে জামাইয়ের শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথ কার্যত বন্ধ। যাঁদের শ্বশুরবাড়ি কাছে-পিঠে, মোটরবাইকে বা অন্য কোনওভাবে চলে যাওয়া যায়, তাঁদের অনেকেও করোনা-জুজুতে ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছেন।

Advertisement

জেলার বিভিন্ন বাজারের ফল বা মাছ বিক্রেতারা জানান, জামাইয়ের পাতে পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে দিতে পছন্দসই জিনিস কেনা হয় জামাইষষ্ঠীর আগের দিন। বুধবার বাজারে ইলিশ, পমফ্রেট, গলদা, বাগদা, ট্যাংরা, পাবদা— সব কিছুরই দেখা মিলেছে। মাহেশের মাছ বিক্রেতা সুরজিৎ দাসের আক্ষেপ, ‘‘অন্যান্য বার এই দিনে মাছ বেচে কুলোতে পারি না। এ বার খদ্দেরই নেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘লকডাউনে লোকের হাতে টাকা নেই। গাড়িঘোড়ার অভাবে বহু মেয়ে-জামাইয়ের পক্ষে আসা কঠিন। তার উপরে আমপানের ধাক্কা। তা সত্বেও কিছুটা বিক্রি হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু কোথায় কী!’’

পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে মিষ্টির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রিষড়ার ফেলু মোদকের কর্ণধার বৈদ্যনাথ দে-র কথায়, ‘‘জামাইষষ্ঠীর আগের দিন দম ফেলার ফুরসত থাকে না। কিন্তু এ বার বাজার খারাপ।’’ পান্ডুয়ার মিষ্টি ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ পাল বলেন, ‘‘গত বছর এ দিনে আড়াই-তিন কুইন্টাল ছানা, তিন-সাড়ে তিন কুইন্টাল দুধের মিষ্টি তৈরি করেছিলাম। এই বার পরিস্থিতি বুঝে মাত্র ৮০ কেজি ছানা আর ৫০ কেজি দুধের মিষ্টি করেছি। সেটাও ফুরোবে কি না সন্দেহ।'’

শশা বাদে ফলের দাম গেরস্থের নাগালেই। কিন্তু আম, জাম, কাঠাল, লিচু নেবে কে! বিকেলে পান্ডুয়া স্টেশন বাজারের ফল বিক্রেতা সমর দে বলেন, ‘‘সব ফল রয়েছে। কিন্তু খদ্দের নেই। সকাল থেকে কুড়ি কেজি আমও বিক্রি করতে পারছি না।’’

এ দিন হাওড়া-হুগলির বাজারে আনাজের দাম আগুন ছিল। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, আমপানে আনাজের ব্যাপক ক্ষতিতেই এই পরিস্থিতি। সিঙ্গুর বাজারে এক সপ্তাহ আগে পটল ছিল ২০ টাকা কেজি। এ দিন তা বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়। ১৫ টাকা থেকে বেড়ে ঝিঙে হয়েছে ৫০ টাকা। ১৪ টাকার করলা বিকিয়েছে ৫০ টাকায়। টোম্যাটো, লাউ, কাঁচালঙ্কা, বরবটি— সব কিছুরই দাম এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।

হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় বেগুন ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছে। কুমড়ো, সজনে ডাঁটা, উচ্ছের দামও উর্ধ্বমুখী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন