মমতার নির্দেশের পরে বঙ্কিম সেতু নিয়ে নড়ল টনক

মাঝেরহাট সেতু দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কেএমডিএ-র অধীনে পাঁচ জনের নজরদারি কমিটি গঠনের পরেই বঙ্কিম সেতুর মেরামতিতে হাত দিচ্ছে ওই সংস্থার হাওড়া ডিভিশন।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪৩
Share:

হাঁ: এমনই অবস্থা বঙ্কিম সেতুর। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মাস সাতেক আগেই উদ্বেগজনক রিপোর্ট দিয়েছিল রাইটস। এর পরেও টনক নড়েনি সেতুর দায়িত্বপ্রাপ্ত কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের। মাঝেরহাট সেতু দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কেএমডিএ-র অধীনে পাঁচ জনের নজরদারি কমিটি গঠনের পরেই বঙ্কিম সেতুর মেরামতিতে হাত দিচ্ছে ওই সংস্থার হাওড়া ডিভিশন।

Advertisement

পাশাপাশি, বছরের পর বছর সেতুর উপরে গাড়ি পার্কিংয়ের অবাধ অনুমতি দিয়ে রীতিমতো পার্কিং-ফি তুলেছে হাওড়া পুরসভা। এখন তারাও তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পার্কিং-ফি নেওয়া তো দূর, সেতুর উপরে কোনও গাড়ি রাখতে দেওয়া হবে না।

হাওড়ার দিক থেকে কলকাতায় আসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বঙ্কিম সেতু। আশির দশকে হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বা এইচআইটি-র তৈরি করা এই সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কে ওই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ করবে তা নিয়ে কেএমডিএ-র সঙ্গে এইচআইটি-র টানাপড়েন চলে বহু বছর। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দায় বর্তায় কেএমডিএ-র হাওড়া ডিভিশনের উপরে। যদিও গত তিন দশকে ওই সংস্থা রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক মতো না করায় সেতুটির অনেকটাই ক্ষতি হয়ে গিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞেরা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন। বিশেষ করে মেট্রোর কাজ চলার জন্য সেতুর হাওড়া ময়দানের দিকের ঢালে পুরসভা ও পুলিশ গাড়ির পার্কিংয়ের অনুমতি দেওয়ায় সারা দিন ধরে অজস্র গাড়ির চাপে সেতুর ক্ষতি বেড়েছে বলেই জানা গিয়েছে।

Advertisement

কেএমডিএ-র এক কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশকে বারবার চিঠি দিয়ে সেতুর উপরে পার্কিংয়ের অনুমতি না দিতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু পুরসভা বা পুলিশ কেউ কান দেয়নি। উপরন্তু পুরসভা পার্কিং-ফি নিয়েছে।’’

বঙ্কিম সেতুর নির্মাণগত ত্রুটি নিয়ে অভিযোগ ছিল প্রথম থেকেই। সেতু বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোনও সেতুর ফুটপাত যতটা উঁচু হওয়া প্রয়োজন ততটা না হলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা যেমন থাকে, তেমনই রেলিং অশক্ত হলে তা ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বেশি। অভিযোগ, এই দুটি ত্রুটিই ওই সেতুতে রয়েছে। সেই কারণেই বছর পাঁচেক আগে একটি যাত্রী সমেত মিনিবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর ফুটপাত টপকে নীচে পূর্ব রেলের হাওড়া শাখার লাইনের উপরে পড়েছিল। রেলিংয়ের অবস্থা যে কতটা খারাপ তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল, এ বছরের প্রথম দিকে সামান্য ঝড়ে প্রায় ২০ ফুট এলাকা নিয়ে রেলিং ভেঙে নীচের প্ল্যাটফর্ম ও রেললাইনের উপরে পড়ার পরে।

যদিও কেএমডিএ-র দাবি, সেতুটির যথেষ্ট বয়স হয়েছে, এর মধ্যে যতটা সম্ভব সুস্থ রাখা যায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভাঙা রেলিং মেরামতি থেকে ফুটপাতের স্ল্যাব পাল্টানোর কাজ নিয়মিত করা হয়েছে। সেতুর গায়ে গজানো গাছ কাটা, ভাঙা অংশ সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টার করে দেওয়া হয়েছে কয়েক মাস আগে।

কেএমডিএ-র এক কর্তা বলেন, ‘‘মাঝেরহাট দুর্ঘটনার পরে ইতিমধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ দল সেতুটি পরিদর্শন করে গিয়েছেন। তাঁরা যেগুলি মেরামত করতে বলেছেন দু’-একদিনের সেই কাজ শুরু হবে।’’ সেতুর মাঝের অনেকটা অংশ রেললাইনের উপরে থাকায় মাঝেরহাটের ঘটনার পরেই পূর্ব রেল মেরামতি শুরু করে দিয়েছে।

কিন্তু সেতুর উপরে অবৈধ পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে কী করবে পুরসভা? হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নির্দেশ দিয়েছি, এখন থেকে আর পুরসভা পার্কিং-ফি নেবে না। ওই সেতুর উপরে যাতে আর কোনও গাড়ি না রাখা হয়, তা পুলিশকে দেখতে বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন