বদলিই হলেন সেই বিচারক মন্দাক্রান্তা

চলতি বছরে টানা ৫২ দিন তাঁর এজলাস বয়কট করেছিলেন শ্রীরামপুর আদালতের আইনজীবীদের একাংশ। দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে তাঁকে বদলির দাবি তোলা হয়েছিল। শ্রীরামপুর দেওয়ানি আদালতের (সিনিয়র ডিভিশন) সেই বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহাকে শেষ পর্যন্ত বদলির নির্দেশই দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী ২ মে থেকে বর্ধমান আদালতের ‘লিভ রিজার্ভ অফিসার’ পদে মন্দাক্রান্তাদেবীকে কাজ করতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫৮
Share:

চলতি বছরে টানা ৫২ দিন তাঁর এজলাস বয়কট করেছিলেন শ্রীরামপুর আদালতের আইনজীবীদের একাংশ। দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে তাঁকে বদলির দাবি তোলা হয়েছিল। শ্রীরামপুর দেওয়ানি আদালতের (সিনিয়র ডিভিশন) সেই বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহাকে শেষ পর্যন্ত বদলির নির্দেশই দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী ২ মে থেকে বর্ধমান আদালতের ‘লিভ রিজার্ভ অফিসার’ পদে মন্দাক্রান্তাদেবীকে কাজ করতে হবে। অর্থাৎ, কোনও বিচারক ছুটিতে গেলে তাঁর পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করবেন মন্দাক্রান্তাদেবী— নির্দেশ এমনই।

Advertisement

হাইকোর্টের এই নির্দেশে মন্দাক্রান্তাদেবীর পদমর্যাদা ক্ষুণ্ণ হল বলে মনে করছেন আইনজীবীদের কেউ কেউ। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবীদের একাংশও। তাঁরাও মনে করছেন— ওই নির্দেশ আসলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। অবিচারের শিকার হয়েছেন এই বিচারক।

হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিস সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, মন্দাক্রান্তাদেবীকে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি করা হয়েছে বলে যে কথা উঠছে, তা সত্য নয়। প্রতি বছর মার্চে বিচারকদের ‘বাৎসরিক বদলি’ (অ্যানুয়াল ট্রান্সফার) হয়। চলতি বছরে মন্দাক্রান্তাদেবী-সহ ৩০০ জনেরও বেশি বিচারককে বদলি করা হয়েছে। বিচার ব্যবস্থায় সব পদই গুরুত্বপূর্ণ। যখন কোনও বিচারককে বদলি করা হয়, তখন দেখা হয় সংশ্লিষ্ট বিচারক যে পদমর্যাদায় ছিলেন, তা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে। প্রধান বিচারপতি-সহ পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে গড়া কমিটিই বিচারকদের বদলির সিদ্ধান্ত নেন। অভিজ্ঞ বিচারক না হলে কোনও অবস্থাতেই তাঁকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় না। কেন না, প্রতিদিনের বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে তিনি যদি আগে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত না থাকেন, তা হলে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজের দায়িত্ব সামলাতে পারবেন না। তাই নতুন দায়িত্বে মন্দাক্রান্তাদেবীর গুরুত্ব বাড়তে চলেছেই বলেই ওই অফিসের দাবি।

Advertisement

কিন্তু রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিসের এই দাবির সঙ্গে সহমত নন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি মনে করেন, ‘‘বদলি নিশ্চয়ই হাইকোর্টের এক্তিয়ারভুক্ত। কিন্তু তা যদি কোনও বিচারকের ক্ষেত্রে সাজা বলে মনে হয়, তা হলে আন্দোলনকারী আইনজীবীরা উৎসাহিত হবেন।’’ বিকাশবাবুর কথায়, আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকের বিরোধ মেটানো নিশ্চয়ই হাইকোর্টের কর্তব্য। কিন্তু তা যদি বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা বলি দিয়ে হয়, তা হলে খুব মুশকিল। আর এক আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ তো আরও সরাসরি মন্তব্য করেন, ‘‘প্রধান বিচারপতি আদালতের প্রশাসনিক ব্যাপারে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। বিশেষ করে বিচারকদের মর্যাদা রক্ষায়।’’ একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘হাইকোর্টের কোনও বিচারপতি যদি একই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েন, সে ক্ষেত্রেও কি একই ব্যবস্থা হবে?’’

মন্দাক্রান্তাদেবীর বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে তাঁকে জেলা থেকে বদলির দাবিতে গত ৭ জানুয়ারি থেকে শ্রীরামপুর আদালতের আইনজীবীদের একাংশ আন্দোলন শুরু করেন। টানা তাঁর এজলাস বয়কট চলে। তাঁকে নানা ভাবে হেনস্থাও করা হয়। শেষ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের নির্দেশে হাইকোর্টের তরফে হুগলির দায়িত্বে থাকা বিচারপতি নিশীথা মাত্রে এবং বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় শ্রীরামপুর আসেন। তাঁদের হস্তক্ষেপে আইনজীবীরা বয়কট প্রত্যাহার করেন।

সেই সময়ে আন্দোলনকারী আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, বিচারপতিরা মন্দাক্রান্তা দেবীকে বদলির আবেদন বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত মন্দাক্রান্তা দেবীর বদলির নির্দেশে খুশি আন্দোলনকারী আইনজীবীরা। নির্দেশকে নিজেদের ‘জয়’ হিসেবে দেখলেও তাঁরা এ নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাইছেন না। আন্দোলনকারীদের পক্ষে ওই আদালতের বার লাইব্রেরির সম্পাদক রামচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ নিয়ে কিছু বলার নেই।’’ মন্তব্য করতে চাননি বার লাইব্রেরির সভাপতি ঘনশ্যাম অগ্রবালও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন