মাদার ডেয়ারিকে রুগ্ণ করার চক্রান্তের অভিযোগ

অথচ পরিস্থিতি মোটেও এই রকম ছিল না। ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভলপমেন্ট বোর্ডের (এনডিডিবি) আওতায় বাম আমলে ১৯৭৮ সালে ডানকুনি মাদার ডেয়ারি উৎপাদন ও বিপণন শুরু করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডানকুনি শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯ ০৬:৪১
Share:

উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ছয় লক্ষ লিটার। অথচ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র দেড় লক্ষ লিটার। ফলে ক্রমাগত ক্ষতির মুখ দেখছে ডানকুনি মাদার ডেয়ারি প্ল্যান্ট। বাজারে দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তা সত্ত্বেও এই সংস্থাকে আর্থিকভাবে দুর্বল করে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্তের অভিযোগ আনল এখানের বাম শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতারা।

Advertisement

অথচ পরিস্থিতি মোটেও এই রকম ছিল না। ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভলপমেন্ট বোর্ডের (এনডিডিবি) আওতায় বাম আমলে ১৯৭৮ সালে ডানকুনি মাদার ডেয়ারি উৎপাদন ও বিপণন শুরু করে। রাজ্য সরকারের অনুরোধে টানা ১৮ বছর এনডিডিবি এই প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চালিয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে মাদার ডেয়ারির পরিচালনার দায়িত্বভার আসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে। ২০১১ সাল পর্যন্ত বাম সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন লাভের মুখও দেখে এই প্ল্যান্ট। এই সময় মজুত অর্থের পরিমাণ ২৮ কোটি থেকে বেড়ে হয় ৫৮ কোটি টাকা। পাশাপাশি বকেয়া ২৩ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ হয় সেই সময়কালের মধ্যেই।

বাম শ্রমিক সংগঠনের দাবি, রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই মাদার ডেয়ারির আর্থিক স্থিতি নষ্ট হয়ে যায়। ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে মাদার ডেয়ারির সাড়ে চার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। যে ক্ষতির ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। পাশাপাশি দুধের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন কম করা হচ্ছে। তার ফলে দুধের বিক্রিও বর্তমানে অনেকটা কমে গিয়েছে। উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন গড়ে ছয় লক্ষ লিটার থাকা সত্ত্বেও কোনও অজানা কারণে উৎপাদন কমিয়ে আনা হয়েছে দেড় লক্ষ লিটারে। অর্থাৎ মোট উৎপাদন ক্ষমতার চার ভাগের তিন ভাগই অব্যবহৃত অবস্থায় থেকে যাচ্ছে।

Advertisement

তার উপর বাম সংগঠনের অভিযোগ, ডানকুনিতে নিজস্ব প্ল্যান্টের ক্ষমতা কমিয়ে গুসকরা এবং বর্ধমান স্টেট ডেয়ারিতে উৎপাদনের হার বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মাদার ডেয়ারির ঘাড়ে অন্য ছোট ডেয়ারির দায়ভার চাপিয়ে ডানকুনি প্ল্যান্টের উৎপাদন ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করা হচ্ছে। কর্মীদের আশঙ্কা, মাদার ডেয়ারির আর্থিক ভিত্তি যে ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে প্রকল্পটি বেসরকারি হাতেও চলে যেতে পারে।

এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে, সার্বিক সুরাহার দাবি জানিয়েছেন ডানকুনি মাদার ডেয়ারির বাম শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতারা। পাশাপাশি মাদার ডেয়ারির পরিচিতি ও ঐতিহ্য বজায় রাখতে একে আইনগত দিক থেকে সম্পূর্ণভাবে রাজ্য সরকারের সংস্থায় পরিণত করার কথাও বলেছেন বাম নেতারা। শূন্যপদ পূরণ, বদলি কর্মীদের পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে আনার দাবিও করেছেন তাঁরা। প্রবীণ সিটু নেতা শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাদার ডেয়ারিকে চাঙ্গা করতে উৎপাদন, বণ্টন এবং বিপণনে বাস্তবতা মেনে স্বচ্ছ নীতি গ্রহণ করতে হবে। আমাদের যুক্ত কনভেনশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মাদার ডেয়ারির সামগ্রিক চিত্র বিধানসভা অধিবেশনে তুলে ধরা হবে।’’

মাদার ডেয়ারি কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য এইসব অভিযোগ নিয়ে কর্তারা কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

এখন দেখার, ঐতিহ্যমণ্ডিত

মাদার ডেয়ারির হাল ফেরাতে মুখ্যমন্ত্রী বাম সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন