নোটবন্দি-জিএসটির জোড়া ফলায় বিদ্ধ জরিশিল্প

নেই কাজ, বাধ্য হয়ে দিনমজুরি

গ্রামীণ হাওড়ার অর্থনীতির ভাল-মন্দ অনেকটাই নির্ভর করে জরিশিল্পের উপরে। পাঁচলা, উলুবেড়িয়া, সাঁকরাইল, বাগনান, ডোমজুড়, উদয়নারায়ণপুর, আমতার ঘরে ঘরে জরির কাজ হয়।

Advertisement

নুরুল আবসার

পাঁচলা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:৪০
Share:

সঙ্কট: হাতে গোনা কয়েকজনই ভরসা। নিজস্ব চিত্র

একে নোটবন্দিতে রক্ষে নেই, তার উপরে জিএসটি দোসর।

Advertisement

জরির কাজে বছর কুড়ির অভিজ্ঞতা রয়েছে পাঁচলার গাববেড়িয়ার শেখ আকরামের। কিন্তু চলতি বছরে হাতে কোনও কাজ নেই। সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করছেন তিনি। আবার গাববেড়িয়ার শেখ মনি, শেখ এনামুলের মতো অভিজ্ঞ জরিশিল্পীরা এখন ঠিকা শ্রমিকের কাজ বেছে নিয়েছেন।

গ্রামীণ হাওড়ার অর্থনীতির ভাল-মন্দ অনেকটাই নির্ভর করে জরিশিল্পের উপরে। পাঁচলা, উলুবেড়িয়া, সাঁকরাইল, বাগনান, ডোমজুড়, উদয়নারায়ণপুর, আমতার ঘরে ঘরে জরির কাজ হয়। সবচেয়ে বেশি কাজ হয় পাঁচলায়। সব মিলিয়ে জেলার অন্তত পাঁচ লক্ষ মানুষ এই কাজের উপরে নির্ভরশীল।

Advertisement

জরি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, হাওড়ার ওস্তাগররা মূলত মেটিয়াবুরুজের হাটে এবং কলকাতায় মহাজনদের কাছে পণ্য বিক্রি করেন। তাঁরা কলকাতার ব্যবসায়ীদের থেকে থান কিনে আনেন। তারপর কারিগরদের মাধ্যমে থানে জরির নকশা বসিয়ে সেগুলি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বিনিময়ে ওস্তাগরেরা মজুরি পান। একজন ওস্তাগরের কাছে একাধিক কারিগর কাজ করেন। গত বছর নোটবন্দির পরে এই শিল্পে প্রথম ধাক্কা লাগে। সেই মন্দা চলে প্রায় মার্চ মাস পর্যন্ত। তারপর ধীরে ধীরে ফের কাজ শুরু হয়। কিন্তু জরির বাজার স্বাভাবিক হওয়ার মুখেই ফের জিএসটির ধাক্কা। কারণ গ্রামীণ হাওড়ার অধিকাংশ ওস্তাগরের কোনও ব্যবসায়িক নথি নেই। জিএসটি চালু হওয়ার পরে তাঁদের লেনদেন প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে। পুজোর সময়েও সেভাবে বরাত মেলেনি।

শেখ নজরুল নামে পাঁচলার এক ওস্তাগর বলেন, ‘‘আমি যেখান থেকে বরাত পাই, কলকাতার সেই ব্যবসায়ী জানিয়ে দিয়েছেন, জিএসটি নম্বর না হলে কাজ দেবেন না। ফলে এখন কাজ প্রায় বন্ধ। এখন ওস্তাগরদের অবস্থা দিনমজুরের থেকেও খারাপ।’’ তাঁর আক্ষেপ, নোটবন্দির পরে এমনিতেই বরাত কমে গিয়েছে। তার উপরে জিএসটি। জিএসটি নম্বর না থাকলে কাপড়ের দামের ৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে। ফলে মজুরি কমে যাচ্ছে। একই অভিযোগ করেছেন একাধিক ওস্তাগর। কেউ কেউ আবার বলেছেন, তাঁরা জিএসটি নম্বর পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু সেটি পেতে সময় লাগবে। ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

কারিগরদের অবস্থা আরও শোচনীয়। আমতার চন্দ্রপুরের শেখ সাহেব, শেখ মেহরাজেরা পাঁচলার বিভিন্ন ওস্তাগরের কাছে কাজ করেন। নোটবন্দির পরে তাঁরা চাষ করতে শুরু করেছিলেন। পরে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হওয়ায় আবার কাজে বসেন। কিন্তু জিএসটির পরে এখন আবার কাজ অনিয়মিত। ফলে ফের চাষের কাজ করতে হচ্ছে।

আপাতত, তাই শুধুই এখন ‘আচ্ছে দিনে’র অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন