জমিদানের পরেও নেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, ক্ষোভ

নিজেদের যে এখনও পাকা বাড়ি হয়নি, তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই গুণধরবাবুদের। তাঁদের আক্ষেপ এখনও গ্রামের কচিকাঁচাদের দূরে পড়াশোনা করতে যেতে হচ্ছে বলে। ৭৫ বছর বয়সী গুণধরবাবু বলেন, ‘‘সরকার বলল বলে বাচ্চাদের মুখ চেয়ে তিন ভাই মিলে জমি দিলাম।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৭ ১৪:০৯
Share:

জমিদাতা: নিজস্ব চিত্র

তাঁরা দিনমজুর। সারাজীবন পরিশ্রম করেও নিজেদের পাকা বাড়ি তৈরি করতে পারেননি। তবু, উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের কামিনা কাজিরচক গ্রামের গুণধর মণ্ডল এবং তাঁর দুই খুড়তুতো ভাই পরেশ ও সরেশ দু’কাঠা জমি দান করেছিলেন এলাকায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু বছর পার। এখনও সেই কেন্দ্র হল না। গ্রামের কচিকাঁচারা এখনও পড়তে যাচ্ছে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে এক গ্রামবাসীর বাড়িতে চলা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে।

Advertisement

নিজেদের যে এখনও পাকা বাড়ি হয়নি, তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই গুণধরবাবুদের। তাঁদের আক্ষেপ এখনও গ্রামের কচিকাঁচাদের দূরে পড়াশোনা করতে যেতে হচ্ছে বলে। ৭৫ বছর বয়সী গুণধরবাবু বলেন, ‘‘সরকার বলল বলে বাচ্চাদের মুখ চেয়ে তিন ভাই মিলে জমি দিলাম। কিন্তু এখনও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র হল না। অথচ আমাদের বলা হয়েছিল জমি দান করলেই কেন্দ্রের জন্য ভবন তৈরি হয়ে যাবে।’’

কেন্দ্রটি এখন যেখানে চলছে, সেখানকার ভারপ্রাপ্ত কর্মী সুব্রতা পোল্যে বলেন, ‘‘আমি বারবার দফতরে তাগাদা দিয়েছি। মাঝে একবার দফতরের আধিকারিকেরা জমিটি পরিদর্শন করতে এসেছিলেন। কিন্তু তার পরে কী হল, জানি না।’’

Advertisement

কী বলছেন ব্লকের সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পের কর্তারা?

তাঁদের দাবি, ওই জমিতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরির কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। শিশুবিকাশ প্রকল্প অধিকর্তা (সিডিপিও) তথাগত নাগ জানান, আসলে জমিটি একটু নিচু। ভবন তৈরির জন্য বরাদ্দ ৭ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। এই টাকায় জমি ভরাট করে উঁচু করা যাবে না। তাই ১০০ দিনের প্রকল্পে জমিটি ভরাট করে তার পরে ভবন তৈরির কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, ‘‘তিন জন দরিদ্র গ্রামবাসী জমি দিতে যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন তার নজির খুব একটা নেই। এই জমিতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র হবেই।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কামিনা কাজিরচক গ্রামের জন্য একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র (১৬৪ নম্বর) বরাদ্দ হয় ১০ বছর আগে। প্রথম থেকেই কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নেই। তাই প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে এক ব্যক্তির বসতবাড়িতে কেন্দ্রটি চালু হয়। নিয়ম হল, নিজস্ব অন্তত দু’কাঠা জমি না থাকলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য বাড়ি তৈরির টাকা বরাদ্দ হয় না। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরেও জমি জোগাড় করতে পারেননি প্রকল্পের কর্তারা। শেষ পর্যন্ত গুণধরবাবুরা দু’কাঠা জমি দিতে রাজি হন। ভবন তৈরি হয়নি।

বর্তমানে কেন্দ্রটি চলছে লতিকা পোড়্যে নামে এক প্রৌঢ়ার দোতলা বাড়ির একতলার বারান্দা। ছাত্রছাত্রীদের খাবার তৈরির জন্য রান্নাঘর হয়েছে। কিন্তু এতদিনেও কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ লতিকাদেবী বলেন, ‘‘ওরা তো জমি পেয়েছে। ঘর তৈরি করে উঠে যাচ্ছে না কেন, বুঝতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন