বিঘ্ন: ফাঁকা চুঁচুড়া আদালত চত্বর (বাঁ দিকে) অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে পোস্টার চন্দননগর আদালত চত্বরে (ডান দিকে)। ছবি: তাপস ঘোষ
বিচারপ্রার্থীদের হয়রানির জন্য ওঁরা দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন বৃহস্পতিবার। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পরে, শুক্রবার সেই হয়রানি আরও বাড়ল। এমনকী, আগামী কয়েকদিনেও বিচারপ্রার্থীদের যে হয়রানির শিকার হতে হবে, আইনজীবীদের থেকে মিলল সেই ইঙ্গিতও!
এক আইনজীবীকে মারধরে অভিযুক্ত কলকাতা পুলিশের এক কর্তাকে গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন চন্দননগর আদালতের আইনজীবীরা। শুক্রবার একই দাবিতে ওই আদালত ছাড়াও হুগলির বাকি তিনটি আদালতেও (চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর এবং আরামবাগ) কর্মবিরতি পালন করলেন আইনজীবীরা। ফলে, এ দিন আরও বেশি বিচারপ্রার্থীকে ওই চার আদালতে এসেও ফিরে যেতে হল।
এ দিন সকালে চন্দননগর আদালতের গেটের সামনে বিক্ষোভ-সভায় যোগ দেন কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন আদালতের বহু আইনজীবী। অভিযুক্ত পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ওঠে। রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য কমল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একজন আইনজীবীর সঙ্গে এক পুলিশকর্তা যে ব্যবহার করেছেন, তা নিন্দনীয়। নিজের অন্যায় ঢাকতে উনি ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন। ব্যবস্থা নেওয়া না-হলে আগামী দিনে রাজ্যের ১৮৮টি বার কাউন্সিলের আইনজীবীরা একত্রিত হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন।’’ বিকেলে চন্দননগর আদালতের আইনজীবীরা বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেন, আজ, শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত এই আদালতে মামলা সংক্রান্ত কোনও কাজ তাঁরা করবেন না। ফলে, এই আদালতে বিচারপ্রার্থীদের জন্য আরও পাঁচ দিনের হয়রানি অপেক্ষা করে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার চন্দননগর আদালতে এসেও বিচারপ্রার্থীরা ফিরে যাওয়ায় দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন ওই আদালতের সিভিল বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক দে। এ বার আন্দোলনের মাত্রা বাড়ার পরে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘আইনজীবীরা সকলে মিলে এই আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পুলিশকর্তা আমাদের এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে যে ভাবে মিথ্যা মামলা করেছেন, তার জন্যই প্রতিবাদ।’’
বুধবার রাত ১১টা নাগাদ শুভদ্যুতি পান নামে চন্দননগর আদালতের এক আইনজীবী মোটরবাইকে ভদ্রেশ্বর থেকে মানকুণ্ডুতে বাড়ি ফিরছিলেন। ভদ্রেশ্বরের রেলপুলের নীচে দিয়ে ফেরার সময়ে তিনি যানজটে পড়েন। ভদ্রেশ্বরের অরবিন্দ পল্লির বাসিন্দা, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ডিএসপি শোভন অধিকারীও ফেরার সময়ে ওই যানজটে আটকে পড়েছিলেন। শুভদ্যুতিবাবু কোনও মতে বেরনোর সময়ে তাঁর মোটরবাইকটির সঙ্গে শোভনবাবুর গাড়ির ঘষা লাগে। এর জেরে শোভনবাবুর গাড়ি-চালকের সঙ্গে শুভদ্যুতিবাবুর বচসা বাধে। শুভদ্যুতিবাবুকে ওই চালক মারধরও করেন বলে অভিযোগ। গোলমাল না-থাকায় গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন ওই পুলিশকর্তা। এর পরে শুভদ্যুতিবাবুর সঙ্গে তিনিও বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। তিনিও শুভদ্যুতিবাবুকে কটূক্তি করেন এবং মারধর করেন বলে অভিযোগ দায়ের হয়। পাল্টা শুভদ্যুতিবাবুর বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, গাড়ির ধাক্কা, ভাঙচুর, অস্ত্র প্রদর্শন-সহ কয়েকটি ধারায় মামলা করেন শোভনবাবুও।
শুভদ্যুতিবাবুর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলার কথা জানতে পেরেই এ দিন আইনজীবীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। চন্দননগর আদালতের সামনে মাইক বেঁধে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন তাঁরা। সেখানে ছিলেন শুভদ্যুতিবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘সে দিন আমার কাছে কোনও অস্ত্রও ছিল না, ভাঙচুরও কিছু করিনি। মিথ্যা মামলা হল আমার নামে।’’
আইনজীবীরা এককাট্টা। কিন্তু তাঁর জন্য সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের কেন ভুগতে হবে, সে উত্তর মেলেনি। বৃহস্পতিবারের পরে এ দিনও চন্দননগর আদালতে কাজ না-হওয়ায় ফিরে যেতে হয়েছে ধনেখালির তন্ময় সাধুখাঁকে। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘কী যে হচ্ছে! বুধবার পর্যন্ত আদালতে কাজ বন্ধ থাকলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’’
শ্রীরামপুরের চন্দন পাল কর্মসূত্রে থাকেন কোলাঘাটে। একটি মামলা সংক্রান্ত কাজে শুক্রবার সেখান থেকে মোটরবাইকে শ্রীরামপুর আদালতে আসেন তিনি। এসে দেখেন, আর পাঁচটা দিনের কোলাহল নেই। তার পরে জানতে পারেন কাজ বন্ধের কারণ। তাঁর হতাশা, ‘‘ছুটি নিয়ে এত দূর আসা বেকার হল।’’ বাকুঁড়া থেকে আরামবাগ আদালতে এসেছিলেন সুকুমার ঘোষ। ক্ষুব্ধ তিনিও, ‘‘আদালতের মতো জায়গায় আচমকা কাজ বন্ধ করা অনৈতিক। মুশকিলে পড়লাম।’’