প্রতীকী ছবি।
সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।
শুরুটা হয়েছিল সেই বাম আমলে। নয়ের দশকের গোড়ায়। ইটভাটার মালিকেরা তখন মুর্শিদাবাদ থেকে লোক এনে বলাগড়ের গঙ্গার চর থেকে মাটি কাটাতেন। এলাকার প্রবীণেরা জানান, সেই সময় গুটিকয়েক সিপিএম নেতা বিষয়টি ‘কন্ট্রোল’ করতেন। রাজ্যে পালাবদলের পরে সেই কাজটাই এখন তৃণমূল নেতারা করছেন বলে অভিযোগ।
কাজটা কী?
প্রশাসনের একাংশ এবং গ্রামবাসীদের মতে, এককথায় কারবারের ‘মধু’ খাওয়া। ওই নেতাদের কেউ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, কেউ প্রাক্তন সভাপতি কেউবা অন্য কোনও পদাধিকারী। এঁদের সিংহভাগই সরাসরি কারবারে যুক্ত থাকেন না। তাঁদের কাজ, কারবারিরা পুলিশ-প্রশাসনের ‘ঝামেলা’য় পড়লে বাঁচানো। জরিমানা হলে অঙ্ক কম করার। বিনিময়ে মাটি-কারবারিরা নেতাদের ‘খুশি’ করেন। শাসকদলের সম্মেলন সফল করতেও তাঁরা ‘বিশেষ দায়িত্ব’ নেন।
তবে, বলাগড়ের চর এলাকার বাসিন্দা, শাসকদলের এক নেতা সরাসরিই মাটি কারবারে যুক্ত বলে অভিযোগ। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে মাসে মাটি কাটার মরসুমে তাঁর বাড়ির সামনে দশ-বিশটা মাটির ট্রাক সব সময়েই দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুটা দূরে রাজবংশীপাড়ার এক সিপিএম কর্মীও বুক ফুলিয়ে ওই কারবার চালান। এই দু’জনই এখানে গঙ্গাপাড়ের মাটি বা বালি তোলার ক্ষেত্রে শেষ কথা বলে দাবি গ্রামবাসীদের।
বলাগড়ের বিএলএলআরও জয়ন্ত দত্তের দাবি, অবৈধ বালি-মাটির কারবার বন্ধ করতে গিয়েই তিনি শাসকদলের একাংশের বিরাগভাজন হন। তাঁর গায়ে হাত তোলা হয়। তবে, মাটি কাটা বন্ধ করতে গিয়ে ভূমি দফতরের কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ নতুন নয়। ২০১৩ সালে ডুমুরদহ-নিত্যানন্দপুর-১ পঞ্চায়েতের রামনগর এলাকায় মাটি কাটা বন্ধ করতে গিয়ে দফতরের এক আধিকারিককে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে শাসানোর অভিযোগ উঠেছিল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।
দলের কিছু লোক যে ওই অবৈধ ব্যবসায় জড়িত, তা স্পষ্ট বলাগড়ের বিধায়ক অসীম মাঝির কথাতেও। তিনি বলেন, ‘‘কিছু লোক এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে নিশ্চয়ই দলের বদনাম করছেন। দল এটা রেয়াত করবে না। আমি যথাস্থানে বলব।’’ তবে, জয়ন্তবাবুকে নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত এক তৃণমূল নেতা ওই কারবারে দলের কেউ জড়িত থাকার কথা মানতে চাননি। তাঁর অভিযোগ, বিএলএলআরও দফতরে কাজের কাজ হয় না। মানুষ গিয়ে হয়রান হন। তাঁর দাবি, ‘‘সে সব কথা বলতেই দু’দিন আগে ওই অফিসে গিয়েছিলাম। জয়ন্তবাবু সত্য গোপন করতে মিথ্যা মামলা করে দিলেন।’’ জয়ন্তবাবু এ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
বুধবার বিকেলে গঙ্গা থেকে বালি তোলার অভিযোগে ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আটক হয়েছে বালিবোঝাই একটি ট্রলার ও নৌকা। পুলিশ জানায়, ধৃতেরা শান্তিপুরের বাসিন্দা। এ পাড়ে এসে বালি তুলছিল। ধৃতদের বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক সকলকেই ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।