মেলেনি সাহায্য, ক্ষোভ সুন্দরপুরের ঢাকিদের

সুন্দরপুর গ্রামে সকালেই ঢাকের বোল উঠেছে। কেউ হাতটাকে একটু ঝালিয়ে নিচ্ছেন। কেউ বা সকালের নরম রোদে ঢাকের চামড়াটা সেঁকে নিচ্ছেন। পুজো যে এসে গেল। আজ, রবিবার বিশ্বকর্মা পুজোয় গ্রাম ছাড়ল অসিত রুইদাস আর সঞ্জয় রুইদাসদের গ্রামের ২০ জনের একটি দল।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৫৩
Share:

বাদ্যি: পুজোর আগে ঢাকে কাঠি দিয়ে অনুশীলন। সুন্দরপুরে। ছবি: দীপঙ্কর দে

লাল মোরামের রাস্তা ছাড়িয়ে দু’ধারে কচি সবুজ ধানের গ্রামকে পিছনে ফেলে ওঁরা ডেরা ছাড়ছিলেন।

Advertisement

শনিবার সাত সকাল থেকেই ওঁদের গ্রাম ছাড়া শুরু হয় ফি-বছর এই সময়টা। ঘরে রেখে গেলেন বৃদ্ধ মা, বাবা, স্ত্রী আর ছোট ছেলে-মেয়েদের। বিনয়ের ছেলেটা একটু ডাগর হতেই কাঁসি হাতে নিয়ে বায়না ধরছিল। বাবার পিছু নেবে। কিন্তু স্কুলে যে ছুটি এখনও পড়েনি। মা পিঠে এক ঘা-দিতেই ছেলের ছোখ এখন ছলছল।

সুন্দরপুর গ্রামে সকালেই ঢাকের বোল উঠেছে। কেউ হাতটাকে একটু ঝালিয়ে নিচ্ছেন। কেউ বা সকালের নরম রোদে ঢাকের চামড়াটা সেঁকে নিচ্ছেন। পুজো যে এসে গেল। আজ, রবিবার বিশ্বকর্মা পুজোয় গ্রাম ছাড়ল অসিত রুইদাস আর সঞ্জয় রুইদাসদের গ্রামের ২০ জনের একটি দল। হাওড়া, শিয়ালদহ, শ্যামবাজার আর বাগবাজারে কলকাতা শহরে ওঁরা ছড়িয়ে পড়বেন। পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে দরকষাকষির পর রফা হলে মণ্ডপে আস্তানা গড়বেন। গড়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজ। দুর্গাপুজোর রোজগার কিছুটা বেশি। পশুর চামড়ায় এখন ঢাক তৈরির খরচও বিস্তর। কাঠ, মজুরি মিলিয়ে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা।

Advertisement

কয়েক প্রজন্মের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ঘর ঢাকির বাস কামাপুকুর গালোয়া গোঘাটের সুন্দরপুর গ্রামে। অসিত বলছিলেন, ‘‘সারা বছর ঢাকের কাজ পাই না। উৎসব-পার্বণে আমরা ডাক পাই। অন্য সময়ে চাষের খেতে কাজ করি। বাপ-ঠাকুর্দাকে বাজাতে দেখেছি। তবে কী করে কার কাছে ঢাক শিখলাম তা আজ আর মনে করতে পারি না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ধরে নিন, ওঁরাই আমাদের শিক্ষাগুরু।’’

সুন্দরপুর গ্রামে এমন প্রবীণ ঢাক শিল্পীরা আছেন, যাঁরা নতুন প্রজন্মের ছোট ছেলেদের তালিম দেন। তারপর তাঁরা সুন্দপুরের তল্লাট ছাড়িয়ে গ্রামে, শহরে দেশের নানা প্রান্তে, রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েন।

দুর্গাপুজোয় একটা পাঁচ জনের দলের রেট (খরচ) এখন ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। বড় পুজো উদ্যোক্তারা হলে টাকার অঙ্কটা ভালই হয়। ওঁরাই জানালেন, মুম্বই, রাজ‌স্থান, দিল্লি-সহ দেশের নানা রাজ্যে ওঁরা ঢাক বাজিয়ে মানুষকে মানুষকে আনন্দ দিয়েছেন। কিন্তু সুন্দরপুরের কারও কপালে এখনও বিদেশে বাজানোর বরাত মেলেনি। সেই নিয়ে দুঃখের কথাও গোপন করেননি তাঁরা।

তবে তার থেকেও বড় দুঃখ, সরকারি স্তরে সে ভাবে কোনও সাহায্য না মেলা। গ্রামের ঢাকিরাই জানালেই, পরিবর্তনের সরকার আসার পর গ্রামের পাঁচজন মাত্র শিল্পীর কার্ড পেয়েছেন জেলা তথ্য ও সংস্কতি দফতর থেকে। মাসে দু’হাজারের পেনসন বরাদ্দ। তাও প্রতি মাসে নিয়মিত নয়।

কেন নিয়ম করে টাকা মেলে না, কেনই বা আরও বেশি সংখ্যায় শিল্পীর কপালে জোটে না সরকারি অনুদান? প্রশ্ন বিস্তর। উত্তরটা জানতে ইচ্ছে করে না?

উত্তর মেলে না। মাথা নীচু করে ফের সুর তোলা। মন দেন সুন্দরপুরের অসিত-সুন্দররা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement