কুকুর খাওয়ানোর ‘অপরাধে’ প্রহৃত

পথ-কুকুরদের প্রতিদিন তাঁরা খাবার দেন। এই ‘অপরাধে’ চন্দননগরের বড়ালবাগান এলাকার একটি পরিবারের লোকজনকে মারধর এবং তাঁদের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল সেখানকারই কিছু যুবকের বিরুদ্ধে।

Advertisement

তাপস ঘোষ

চন্দননগর শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০১:০৭
Share:

নিগৃহীত: ভাইয়ের আঘাত দেখাচ্ছেন সুতপাদেবী। নিজস্ব চিত্র

পথ-কুকুরদের প্রতিদিন তাঁরা খাবার দেন। এই ‘অপরাধে’ চন্দননগরের বড়ালবাগান এলাকার একটি পরিবারের লোকজনকে মারধর এবং তাঁদের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল সেখানকারই কিছু যুবকের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর একাংশের পাল্টা অভিযোগ, ওই পরিবারের জন্য এলাকায় কুকুরদের উৎপাত বেড়েছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনার পরে আক্রান্ত সুজিত চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী সুতপাদেবী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। সুতপাদেবীর প্রশ্ন, ‘‘রাস্তার কুকুরদের খাওয়ানো কি অপরাধ? পাড়ার চার-পাঁচটা ছেলে এসে আমাদের মারধর করল। আমার ভাই এসেছিল। তাঁকেও ছাড়েনি। ওরা জানলার কাচ, পাঁচিল ভেঙেছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজিতবাবুরা বরাবরের কুকুরপ্রিয়। পথ-কুকুরদের জন্য নিয়মিত তাঁদের বাড়িতে রান্না হয়। বেশির ভাগ দিন মাছ-ভাত, মাঝেমধ্যে মুরগির মাংস-ভাত, সপ্তাহে একদিন দই-ভাত। দু’বেলা নির্দিষ্ট সময়ে চট্ট্যোপাধ্যায় বাড়ির সামনে হাজির হয়ে যায় খানদশেক কুকুর। কয়েক বছর ধরে এ ভাবেই চলছে। রাস্তায় কোনও কুকুরকে মারধর করা হলেও তাঁরা প্রতিবাদ করেন।

Advertisement

কিন্তু এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ পথ-কুকুরদের এ ভাবে ‘আস্কারা’ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ। ওই বাড়ির সামনে দিয়ে কেউ গেলে কুকুরগুলি তাঁদের তাড়া করে বলেও ওই বাসিন্দাদের দাবি। তাঁরা একাধিকবার কুকুরদের খাওয়ানো বন্ধ করার জন্য চট্টোপাধ্যায় পরিবারকে অনুরোধ করেছিলেন। সুজিতবাবুরা শোনেননি। আগেও কয়েকবার তাঁদের উপরে হামলা হয়েছে বলে সুজিতবাবুদের অভিযোগ। আগেও তিনি পুলিশ, স্থানীয় কাউন্সিলর এবং পুরসভার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু সমস্যা মেটেনি।

সমীর হাজরা নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ওই পরিবারে জন্য রাস্তায় হাঁটাচলাও দায় হয়েছে। ওই বাড়ির সামনে দিয়ে গেলে কুকুর তেড়ে আসছে। নিজের বাড়ির দরজার সামনে জুতো থাকলে মুখে করে নিয়ে পালাচ্ছে। এ সব সহ্য করা যায়? কিছু বলতে গেলেই সুজিতবাবুরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ওঁদের বাড়িতে কারা হামলা করেছে, বলতে পারছি না।’’

বৃহস্পতিবারের গোলমালের কথা শুনে সংশ্লিষ্ট ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অজয় ঘোষ বলেন, ‘‘এটা সম্পূর্ণ এলাকাবাসীর সঙ্গে একটি পরিবারের বিবাদ। আমার কাছে সমস্যা সমাধানের জন্য ওঁরা আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সুজিতবাবুরা আগেই এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় অশান্তি হল।’’

চন্দননগর পুরসভার মেয়র রাম চক্রবর্তী জানান, ওই এলাকার বাসিন্দাদের আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ না-করে সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেদের কোনও পদ্ধতি গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাতে পুরসভার কোনও সাহায্যের প্রয়োজন হলে করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন