Cyclone Amphan

ঝড়ে দফারফা আমের

মনোতোষের মতো একই দশা হুগলির বহু আমচাষির।

Advertisement

প্রকাশ পাল

গুপ্তিপাড়া শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২০ ০১:০৩
Share:

বিনষ্ট: বাগানে লুটোচ্ছে আম, খাচ্ছে ছাগল। তথ্য ও ছবি: সুশান্ত সরকার

মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা।

Advertisement

উদাস চোখে নিজের পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে একাধিক বার এই আপ্তবাক্যই আউড়ে গেলেন মনোতোষ মালো। গুপ্তিপাড়ার টেংরিপাড়ার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষটি আমচাষি। গত ২০ মে আমপানে বিধ্বস্ত হয় তাঁর বাগান। বহু আম পড়ে যায়। যেটুকু বেঁচে গিয়েছিল, তা নষ্ট করে দিল বুধবারের কালবৈশাখী।

মনোতোষের মতো একই দশা হুগলির বহু আমচাষির। জেলা উদ্যানপালন দফতরের হিসেব, হুগলিতে আম চাষের জমি ৬ হাজার হেক্টর। মূলত বলাগড়, পোলবা-দাদপুর, চুঁচুডা-মগরা, শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া এবং সিঙ্গুর ব্লকে আম হয়। জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক মৌটুসী ধর মিত্র জানান, আমপানে প্রচুর আম গাছ থেকে ঝরে গিয়েছে। বেশ কিছু গাছও উপড়ে গিয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯০ কোটি

Advertisement

টাকা। বুধবারের কালবৈশাখীতেও অনেক আম পড়ে গিয়েছে। ফলে, ক্ষতির অঙ্ক বেড়েছে।

মনোতোষ তিন দশক ধরে আম চাষে যুক্ত। নিজের ৮-১০ বিঘে জমির পাশাপাশি আরও প্রায় ২০০ বিঘে বাগান লিজ নিয়েছেন। সব মিলিয়ে গাছের সংখ্যা হাজার তিনেক। তাঁর কথায়, ‘‘আমপান গাছের ৬০% আম ফেলে দিয়েছে। ঠিক সময়ে পাড়তে পারলে ওই আম বাজারে ২৫-৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হত। কিন্তু অসময়ে ঝরে পড়ায় ৩ থেকে ৫ টাকা কেজিতে বেচতে হল। তা-ও অর্ধেক আম

ফেটে বা পচে যাওয়ায় ফেলে দিতে হয়েছে। যেটুকু গাছে ছিল, তার অর্ধেক পড়ে গেল কালবৈশাখীতে। এক কেজি আম ফলাতে প্রায় ১৫ টাকা খরচ। যা ক্ষতি হল, তাতে খরচটুকু ওঠার সম্ভাবনা নেই।’’

হিমসাগর, ফজলি, মোহনভোগ, কিষেণভোগ, বোম্বাই, সরিখাস, আম্রপালি, মল্লিকা, ল্যাংড়া— আমপানের ধাক্কায় বিপর্যস্ত সব প্রজাতি। ব্যবসায়ীরা জানান, গুপ্তিপাড়া থেকে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বিহার, ঝাড়খণ্ডেও আম যায়। দেখনদারি আর স্বাদের রকমফেরে স্থানীয়দের কাছে গুপ্তিপাড়া এখন ‘দ্বিতীয় মালদহ’। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, বৈশাখের মাঝামাঝি থেকে আষাঢ়ের গোড়া পর্যন্ত আমের ভরা মরসুম। এই সময়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার লেনদেন হয় এখানে। ২৫-৩০ ট্রাকে আম প্রতিদিন এখান থেকে বিক্রির জন্য যায়। এ বার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। চাষিরা মনে করছেন, পড়ে যাওয়া আম কার্বাইডে পাকালেও স্বাদ হবে না।

পরিস্থিতি দেখে চাষিদের মনে পড়ছে, বিশ বছর আগে এক বার ঝড়ে এমন সর্বনাশ হয়েছিল।

সে বার গুপ্তিপাড়ায় এক আমচাষি আত্মঘাতী হয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে সুধীর দফাদার নামে

গুপ্তিপাড়া মিরডাঙার এক

আমচাষি বলেন, ‘‘সুইসাইড করার অবস্থাতেই তো এসে দাঁড়িয়েছি!’’

তাঁর লিজ নেওয়া গোটা আটেক বাগানে আট-ন’শো গাছ রয়েছে। অভিজ্ঞ চাষি হিসেব দেন, ‘‘ধারে ৮৪ হাজার টাকার কীটনাশক কিনেছি। চার বার ওই কীটনাশক ছড়াতে

শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। আরও নানা খরচ রয়েছে। অর্থাৎ, ফল ধরাতেই কম করে

দেড় লক্ষ টাকা। বাগানের পাহারাদারদের মাইনে আছে। একেবারে ডুবে গেলাম।’’

পোলবার আম ব্যবসায়ী প্রশান্ত গোল, বৈদ্যনাথ ঘোষ, সুজয় দাসেরা জানান, এখানরকার বাগান থেকে আম কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায়, এমনকি, ভিন্‌ রাজ্যেও

পাড়ি দেয়। কিন্তু আমপান এবং বুধবারের ঝড়ে সিংহভাগ আম নষ্ট হয়েছে। মাটিতে পড়ে থাকা আম গরু-ছাগল খাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন