কত্থকের ছন্দে খ্যাতির আঙিনায় মোহিনী

রাজমিস্ত্রির সামান্য আয়ের টানাটানির সংসার। দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোর পরেও বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল মেয়ে একটু গান শিখুক। কিন্তু মেয়ের মন তখন সুর নয়, নেচে উঠেছে নাচের ছন্দে। সেই নাচই যে মেয়েকে একের পর এক খ্যাতির মুকুট পরাবে ভাবতে পারেননি বাবা-মা।

Advertisement

তাপস ঘোষ

মগরা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০৯
Share:

মোহিনী সাহা। নৃত্যের তালে তালে।ছবি:নিজস্ব চিত্র।

রাজমিস্ত্রির সামান্য আয়ের টানাটানির সংসার। দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোর পরেও বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল মেয়ে একটু গান শিখুক। কিন্তু মেয়ের মন তখন সুর নয়, নেচে উঠেছে নাচের ছন্দে। সেই নাচই যে মেয়েকে একের পর এক খ্যাতির মুকুট পরাবে ভাবতে পারেননি বাবা-মা।

Advertisement

হুগলির মগরায় এক কামরার ঘরে বসে মেয়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া নাচের শংসাপত্র, সেরার পুরস্কার-পদক দেখানোর সময় জলে ভিজে উঠেছিল বাবা-মায়ের চোখ। চন্দননগর গভর্নমেন্ট কলেজের ছাত্রী মোহিনী সাহার নাচের মুকুটে খ্যাতির পালক কম নয়। ২০০৭ সালে ৮ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী অঞ্জু ভট্টাচার্যের কাছে কত্থকের তালিম নেওয়া শুরু। তালিম চলতে চলতেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ। ক্রমে পা রাখা শুরু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতায়। প্রতি ক্ষেত্রেই নিজের দক্ষতা প্রমাণে সফল মোহিনী। ২০১৪ সালে কটকে আন্তর্জাতিক নৃত্য প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান। এরপর কলকাতায় সারা বাংলা নৃত্য প্রতিযোগিতায় ১৪টি রাজ্যের মধ্যে সেরা নৃত্যশিল্পী। ২০১৫ সালে প্রয়াগে ইলাহাবাদ প্রয়াগ সঙ্গীত সমিতির নৃত্য প্রতিযোগিতায় প্রথম। ২০১৬ সালে মহারাষ্ট্রে জাতীয় নৃত্য প্রতিযোগিতায় ১৪টি রাজ্যের মধ্যে প্রথম। দুর্গাপুরে জাতীয় নৃত্য প্রতিযোগিতায় প্রথম। ওড়িশার কটকে মহানদী উৎসবে নৃত্যে সেরার পুরস্কার। ওই বছরেই দেরাদুনে আন্তর্জাতিক নৃত্য প্রতিযোগিতায় ১৬টি দেশের নৃত্যশিল্পীদের মধ্যে সেরা। এ ছাড়াও একাধিক পুরস্কার, পদক রয়েছে মোহিনীর।

বাবা-মায়ের তো ইচ্ছা ছিল গানের। গান ফেলে নাচকে আপন করা কেন!

Advertisement

প্রশ্নটা শুনে সলজ্জ জবাব মোহিনীর, ‘‘ছোটবেলায় টিভিতে মাধুরী দীক্ষিতের অনুষ্ঠান দেখে নাচের ভক্ত হয়ে পড়ি। যতদন গিয়েছে নাচের প্রতি ভালবাসা আরও গাঢ় হয়েছে। নাচই আমার সব।’’

বাবা প্রকাশবাবুর কথায়, ‘‘কখনওই ভাবিনি মেয়ে এমন সাফল্য পাবে। নিজের একাগ্রতা আর অধ্যবসায়ের জোরেই ও এগিয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘যতই কষ্ট হোক, মেয়ের নাচ যাতে না থামে সেই চেষ্টা করব।’’ মা রুমাদেবী বলেন, ‘‘গানের শখ ছিল কিন্তু শিখতে পারেনি। ভেবেছিলাম মেয়েকে গান শেখাব। কিন্তু সংসারের অবস্থার কথা ভেবে থেমে যাই। পরে নাচের প্রতি ওর এত আগ্রহ দেখে শেখানোর ব্যবস্থা করি। ওর সাফল্যে মা হিসাবে গর্ব হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন