বিডিও-র কাছে গিয়ে বিয়ে রুখল কিশোরী

আঠেরো বছরের কম বয়সে মেয়েদের যাতে বিয়ে দেওয়া না হয়, সে জন্য প্রশাসনিক স্তরে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়। যদিও হুগলিতে নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা এখনও বন্ধ হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৩৬
Share:

প্রতীকী ছবি

নাবালিকা বিয়ে ব‌ন্ধের আর্জিতে এলাকায় সচেতনতা মিছিল তখন সবে শেষ হয়েছে। শনিবার এমন সময় পান্ডুয়া ব্লক অফিসে হাজির এক কিশোরী। বয়স সবে ষোলো পেরিয়েছে। বিডিও স্বাতী চক্রবর্তীর কাছে সটান গিয়ে সে জানায়, প্রিয়জনেরা তার বিয়ে ঠিক করতে চাইছেন। কিন্তু সে বিয়ে করতে চায় না। পড়াশোনা আর খেলাধুলো নিয়েই থাকতে চায়। বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। মেয়েটির কথা শুনে তাকে উদ্ধার করে হোমে পাঠিয়েছে প্রশাসন।

Advertisement

আঠেরো বছরের কম বয়সে মেয়েদের যাতে বিয়ে দেওয়া না হয়, সে জন্য প্রশাসনিক স্তরে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়। যদিও হুগলিতে নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা এখনও বন্ধ হয়নি। তবে, প্রশাসনিক আধিকারিকদের দাবি, সচেতনতা আগের থেকে বেড়েছে। কখনও স্কুলের শিক্ষক, সহপাঠী অথবা প্রতিবেশী নাবালিকার বিয়ের তোড়জোড়ের কথা সরকারি দফতরে জানিয়ে দিচ্ছেন। কখনও রুখে দাঁড়াচ্ছে নাবালিকা নিজেই। এ ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, মেয়েটির বাবা-মা দু’জনেই মারা গিয়েছেন। সে পান্ডুয়ার ক্ষিরকুণ্ডিতে দিদি-জামাইবাবুর সংসারে থাকে। স্কুলে পড়ে। ফুটবল এবং অ্যাথলেটিক্সেও দখল আছে। কিন্তু দিদি-জামাইবাবু মেয়েটির বিয়ে দিতে চান। পাত্রের খোঁজও শুরু করেন। মেয়েটির আপত্তি সেখানে ধোপে টেঁকেনি। শুক্রবার বিকেলে পাত্রপক্ষ ‘দেখাশোনা’র জন্য এসেছিল। তারা চলে গেলে সন্ধ্যায় মেয়েটি ফের জানায়, সে বিয়ে করবে না। অভিযোগ, এতে রেগে গিয়ে আত্মীয়েরা মেয়েটির যাবতীয় নথিপত্র ছিঁড়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। মেয়েটি তখন এক বান্ধবীর বাড়িতে চলে যায়। ওই বাড়িতেই রাত কাটায়। পরের দিন দুপুরে কয়েক জন বান্ধবীকে নিয়ে ব্লক অফিসে যায়। এক শিক্ষকও সঙ্গে যান। নাবালিকা বিয়ে বন্ধে পরবর্তী কর্মসূচির জন্য চাইল্ড লাইনের এক আধিকারিক সেখানেই ছিলেন। বিডিও চাইল্ড লাইনের কাছে মেয়েটিকে হস্তান্তর করেন।

Advertisement

ওই সময়ে নাবালিকা বিয়ে বন্ধে পরবর্তী কর্মসূচি শুরু হচ্ছিল। স্কুলপড়ুয়া থেকে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের আধিকারিক, পঞ্চায়েতের কর্মী ওই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন। সেখানে মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয়। মেয়েটি নিজের কাহিনি সেখানেও খুলে বলে। পরে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) নির্দেশে তাকে চন্দননগরের একটি হোমে পাঠানো হয়। বিডিও বলেন, ‘‘মেয়েটি যাতে হোমে থেকে পড়াশোনা এবং খেলাধু‌লো চালিয়ে যেতে পারে, সেই চেষ্টা করা হবে। ওর বাড়ির লোকেরা যদি নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ করা যাবে।’’

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই জেলায় এর আগেও একাধিক নাবালিকা নিজের বিয়ে আটকেছে। মেয়েরা যে অল্প বয়সে বিয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে, এটা অত্যন্ত সদর্থক। সচেতনতা যে বাড়ছে, এটা তার প্রমাণ। একটা ছোট্ট মেয়ের কাঁধে সংসারের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া যে অনুচিত, বড়দের তা বুঝতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন