অটোয় আগুন, দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে আতঙ্ক লিলুয়ায়

কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, ঘটনার দিন গভীর রাতে মুখে রুমাল বাঁধা ৭-৮ জন দুষ্কৃতীর একটি দলকে এলাকায় লাঠি ও তলোয়ার নিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লিলুয়া শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৪
Share:

সন্ত্রাস: অটো ভাঙচুরের পর। নিজস্ব চিত্র

দুষ্কৃতী তাণ্ডবে আতঙ্ক ছড়াল লিলুয়ার বি রোডে। রবিবার রাতের অন্ধকারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল রাস্তার পাশে দাঁড়ানো একটি অটোয়। আগুন লাগানোর চেষ্টা হল স্থানীয় ক্লাবেও। পুড়িয়ে দেওয়া হল ক্লাবের দরজার পর্দা।

Advertisement

কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, ঘটনার দিন গভীর রাতে মুখে রুমাল বাঁধা ৭-৮ জন দুষ্কৃতীর একটি দলকে এলাকায় লাঠি ও তলোয়ার নিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। ওই দলটিই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে তাঁদের ধারণা। এই ঘটনার পরেই সোমবার স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ওই দুষ্কৃতীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কিন্তু কী কারণে এই হামলা, তা রাত পর্যন্ত পরিষ্কার হয়নি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সরস্বতী পুজোর আগের দিন থেকেই বি রোড সংলগ্ন এলাকায় রাতে নানা রকম অঘটন ঘটছিল। কখনও সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে এলাকার লোকজন দেখছেন পাড়ার একটি শুকনো গাছে আগুন লেগে ঝলসে গিয়েছে। সেই সঙ্গে পুড়ে মারা গিয়েছে গাছের গুঁড়ির কোটরে আশ্রয় নেওয়া চারটি কুকুর ছানা। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ২৭ তারিখ রাতে একটি আলমারি তৈরির কারখানার জিনিসপত্র রাস্তায় ফেলে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে এলাকার মানুষ এই ঘটনার খবর জানলেও ততটা গুরুত্ব দেননি। কিন্তু সোমবার সকালেই এলাকার বাসিন্দারা জানতে পারেন, রবিবার গভীর রাতে বি রোডের রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা স্থানীয় বাসিন্দা সাধনা কানুর অ়টোয় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগুন লাগানো হয়েছে এলাকার অন্যতম বড় ক্লাবের কল্যাপসিব্‌ল গেটের ভিতরে ঝোলানো পর্দায়।

Advertisement

এ দিন সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। লোকজন বেরিয়ে ওই ক্লাবের সামনে ভিড় জমান। সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে দাঁড় করানো রয়েছে পুড়ে যাওয়া অটোটি। পোড়া অটোর সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন অটোর মালকিন সাধনাদেবীর ছেলে পাপ্পু কানু। তিনি জানান, বাবা মারা যাওয়ার পরে তিনিই অটো চালিয়ে সংসার চালান। সেটি পুড়িয়ে দেওয়ায় গোটা পরিবার নিয়ে কার্যত পথে বসতে হচ্ছে বলে দাবি তাঁর। তিনি জানান, এ দিন রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ একটি মুদি দোকানের মালিক তাঁকে খবর দেন যে তাঁর অটোয় আগুন লেগে গিয়েছে। এই খবর পাওয়ার পরেই তিনি বালতি নিয়ে এসে আরও কয়েক জনের সাহায্যে জল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পাপ্পু বলেন, ‘‘সময় মতো আগুন না নেভালে গ্যাসে চলা ওই অটোর সিলিন্ডারে আগুন লেগে গেলে ভয়াবহ ঘটনা ঘটত। আশপাশের বাড়িতেও আগুন লেগে যেত।’’

এলাকার বাসিন্দা চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘এই এলাকা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। কোনও গোলমাল নেই। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে যে কাণ্ড ঘটছে, তাতে মনে হচ্ছে এলাকায় সন্ত্রাস তৈরি করার জন্য পরিকল্পনা মাফিক এই কাণ্ড ঘটাচ্ছে এলাকারই কিছু দুষ্কৃতী। পুলিশকে আমরা জানিয়েছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’’

কিন্তু ঠিক কী কারণে এই ঘটনা ঘটছে, তা পরিষ্কার ভাবে কেউই জানাতে পারেননি। এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর পম্পা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কে বা কারা এই ঘটনায় যুক্ত এবং তাদের উদ্দেশ্য কী, তা বুঝতে পারছি না। তবে এর পিছনে নিশ্চয় কোনও উদ্দ্যেশ্য রয়েছে। সেটা খুঁজে বার করতে হবে।’’

হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই এলাকায় সিসি ক্যামেরা না থাকায় তদন্তে অসুবিধা হচ্ছে। তবে কিছু সূত্রে মিলেছে। অপরাধীরা খুব শীঘ্রই ধরা পড়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন