মারধর করে ভাঙচুর, মাছ লুঠ ভেড়িতে

প্রথমে নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর, তার পরে মৎস্যজীবীদের বাড়ি ভাঙচুর করে একটি ভেড়ি ও সংলগ্ন পুকুরে জাল ফেলে প্রচুর মাছ নিয়ে পালাল সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৭ ০৩:২৮
Share:

তাণ্ডব: সোমবারের নিজস্ব চিত্র

প্রথমে নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর, তার পরে মৎস্যজীবীদের বাড়ি ভাঙচুর করে একটি ভেড়ি ও সংলগ্ন পুকুরে জাল ফেলে প্রচুর মাছ নিয়ে পালাল সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

রবিবার রাতে উত্তরপাড়ার কানাইপুরে এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল এবং উত্তরপাড়া-শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি, ওই দলেরই আচ্ছালাল যাদবের ভেড়ি দখল নিয়ে আকচা-আকচির জেরেই ওই ঘটনা। প্রবীরবাবুর অনুগামী কানাইপুর পঞ্চায়েতের সদস্য শচীন মজুমদারের নেতৃত্বেই লুঠপাট চলে বলে অভিযোগ। পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও দুষ্কৃতীদের ধরতে ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।

নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উড়িয়ে পুলিশের দাবি, ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, কেউ কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। কার ভেড়ি সেটাই পরিষ্কার নয়।

Advertisement

বিধায়ক দাবি করেছেন, ‘‘ওই গোলমালে আমি বা আমার কোনও লোক জড়িত নয়। পুলিশকে কড়া হাতে বিষয়টি মোকাবিলা করতে বলা হয়েছে। পুলিশ দোষীদের গ্রেফতার করুক।’’ একই সঙ্গে তিনি ভেড়ির দখল নিয়ে কানাইপুরে যে গোলমাল চলছে, সে কথা মেনে নিয়ে জানান, বিবদমান দু’পক্ষই তাঁর কাছে গিয়েছিল। তিনি বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করলেও কোনও পক্ষই তাঁর কথা শোনেনি। অন্য দিকে, আচ্ছালাল যাদবের দাবি, ‘‘ওখানে দুষ্কৃতীরা মাছ ধরতে আসে। পুলিশের সামনেই ঘটনা হলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। আমি বা আমার কোনও লোক গোলমালে জড়িত নয়।’’

হিন্দমোটর কারখানার পিছনের দিকটাই কানাইপুর পঞ্চায়েত এলাকা। সেখানে কয়েকটি ভেড়ি রয়েছে। স্থানীয় লোকজনই সেখানে মাছ চাষ করেন। তবে, তৃণমূলেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, ভেড়িগুলির দখল নিয়ে কিছু দিন ধরেই দলের দু’টি পক্ষের মধ্যে তাল ঠোকাঠুকি চলছে।

রবিবার রাতে ঠিক কী হয়েছে?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ভেড়ি এলাকায় তিন জন নিরাপত্তা রক্ষী পাহারা দিচ্ছিলেন। রাত পৌনে ১২টা নাগাদ জনা পঞ্চাশ লোক সেখানে হানা দেয়। তাদের হাতে ছিল বোমা, বন্দুক। ওই দলে ৪-৫ জন দুষ্কৃতীও ছিল। বন্দুকের বাট দিয়ে এক নিরাপরত্তা রক্ষীকে মারধর করা হয়। তার পরে তিন নিরাপত্তা রক্ষীকে মোটরবাইকে তুলে একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়। তাঁদের বসার ঘর ভাঙচুর করা হয়। এর পরে দুষ্কৃতীরা কয়েক জন মৎস্যজীবীর বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায়। তার পরে ভেড়ি থেকে মাছ লুঠ করে। এই তাণ্ডব চলে প্রায় রাত ৩টে পর্যন্ত।

অভিযোগ, এই হামলা চলে প্রবীরবাবুর ঘনিষ্ঠ শচীন মজুমদারের নেতৃত্বে। ভেড়ির সঙ্গে যুক্ত লোকজনের একাংশের অভিযোগ, থানায় খবর দেওয়া হলেও পুলিশ দেরিতে আসে। তাদের সামনে দিয়েই দুষ্কৃতীরা পালায়। পুলিশ ধরার কোনও চেষ্টাই করেনি।

সন্তোষ রায় নামে এক মৎস্যজীবী বলেন, ‘‘এর আগেও এক বার এমন ঘটনা ঘটেছে। দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালালেও পুলিশ কিছুই করল না।’’ সুশান্ত রায় নামে আর এক মৎস্যজীবীর অভিযোগ, সোমবার সকালে তাঁকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়। শচীনবাবুর অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে। আচ্ছালাল যাদব নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য চাষিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে রাখেন‌। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। দলকে সব জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন