Cyclone Amphan

ফেরত দিতে হবে টাকা, মাথায় হাত দিনমজুর সরস্বতীর

আমপানের তাণ্ডবে ক্ষতি হয়েছিল ইটাচুনা-খন্যান পঞ্চায়েতের মাকাল্ডি গ্রামের বাসিন্দা সরস্বতী সিংয়ের মাটির ঘরের। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় তাঁর নাম ওঠে। কিছুদিনের মধ্যেই পঞ্চায়েত থেকে খবর পান, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ক্ষতিপূরণের টাকা।

Advertisement

সুশান্ত সরকার

পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২০ ০৫:৩০
Share:

চিন্তায় : ক্ষতিপূরণের টাকায় চলছে বাড়ি তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র

ক্ষতিপূরণ হিসাবে যা পাওয়ার কথা ছিল, পেয়েছেন তার দ্বিগুন। আর এই বাড়তি অর্থ-ই দিনমজুর সরস্বতী সিংকে দাঁড় করিয়েছে বিপর্যয়ের মুখে।

Advertisement

আমপানের তাণ্ডবে ক্ষতি হয়েছিল ইটাচুনা-খন্যান পঞ্চায়েতের মাকাল্ডি গ্রামের বাসিন্দা সরস্বতী সিংয়ের মাটির ঘরের। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় তাঁর নাম ওঠে। কিছুদিনের মধ্যেই পঞ্চায়েত থেকে খবর পান, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ক্ষতিপূরণের টাকা। দ্রুত সেই টাকা তুলে ঘর তৈরি শুরু করেন সরস্বতীদেবী। সেই কাজে ইতিমধ্যেই ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া সব টাকাই তিনি খরচ করে ফেলেছেন। সমস্যা তৈরি হয় এর পরেই।

সরস্বতীদেবী জানতে পারেন, ক্ষতিপূরণের টাকা দু’বার জমা পড়েছিল তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। এখন তাঁকে অর্ধেক টাকা ফেরত দিতে হবে। শুনে অসহায় ওই বৃদ্ধার প্রশ্ন, ‘‘ঘর তৈরিতে সব টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। এখন অত টাকা ফেরত দেব কোথা থেকে?’’ পঞ্চায়েত প্রধান তরুণ চট্টোপাধ্যায় জানান, সরস্বতীদেবীকে ২০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে নোটিস পাঠানো হচ্ছে। তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা পড়ার কথা ছিল ২০ হাজার টাকা। ভুলবশত ক্ষতিপূরণের টাকা দু’বার অ্যাকাউন্টে চলে যায়।সরস্বতীদেবীর বক্তব্য, ‘‘আমি ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু সেই বাবদ কত টাকা সরকারের দেওয়ার কথা, তা জানতাম না। আমাকে পঞ্চায়েত সদস্য বলেছিলেন, ব্যাঙ্কে টাকা এসে গিয়েছে আমার নামে। আমি টাকা তুলে নিয়েছিলাম। আমার ও দোষ নেই।’’

Advertisement

ভুলের দায় তবে কার?

বিডিও (পান্ডুয়া) স্বাতী চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘ওই মহিলা ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেছিলেন। আবার পঞ্চায়েতের তালিকাতেও ওঁর নাম দেওয়া হয়। সেই কারমে দু’বার টাকা যায় ওই মহিলার অ্যাকাউন্টে।’’ পঞ্চায়েত প্রধানের বক্তব্য, ‘‘কী ভাবে ওঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দু’বার টাকা জমা পড়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’ দায় এড়িয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যা মিতালী দাসও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সরস্বতীদেবীর ঘর ঝড়ে ভেঙেছিল। আমি একবারই তাঁর নাম জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু কী ভাবে দু’বার তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়েছে তা বলতে পারব না। তবে খোঁজ নিচ্ছি।’’ এই ঘটনায় প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সিপিএম আমজাদ হোসেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রশাসনের ভুলের জন্য সমস্যায় পড়েছে অসহায় ওই বৃদ্ধা। এখন যদি ২০ হাজার টাকা সরকার ফেরত চায়, ওই গরিব মানুষটি কী ভাবে তা ফেরত দেবেন? সরকারের ভুলের দায় ওঁর উপরে চাপালে চলবে না।’’ টাকা ফেরত দেওয়ার নোটিস পাঠানো হচ্ছে শুনে সরস্বতীদেবীর সাফ কথা, ‘‘আমার পক্ষে টাকা শোধ দেওয়া সম্ভব নয়।’’ যদিও পঞ্চায়েত প্রধানের বক্তব্য, ‘‘সরকারি টাকা যখন নিয়েছে, তখন তা ফেরত দিতে হবে। আমরা ওঁকে সময় দেব। দরকারে অপেক্ষা করব।’’দিনমজুরি করে দিন চলে সরস্বতীদেবীর। দুই ছেলে চাষের কাজে যুক্ত। বৃদ্ধা বলেন, ‘‘কোনও দিন এক সঙ্গে এতগুলো টাকা দেখিনি। টাকা হাতে পেয়ে একটা পাকা ঘর করব বলে ঠিক করি। ঘরের কাজ শেষ হয়নি। ওই টাকাই গলার কাঁটা হয়ে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন