শব্দ ঢাকতে বাজত তারস্বরে গান

শুক্রবার রাতে অবশ্য ডোমজুড়ের পূর্ব কোলড়া রায়পুরে বাঁশঝাড়ের পাশে ওই পরিত্যক্ত বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে পিস্তল, ম্যাগাজিন, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশ। বারুইপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, অস্ত্র কারখানা হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল ওই বাড়িটিকে।

Advertisement

নুরুল আবসার

ডোমজুড় শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩১
Share:

নবনির্মিত: তৈরি হচ্ছে নতুন বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

লোকালয়ের একপাশে বাঁশঝাড়ের পিছনে দীর্ঘদিন ধরে পড়েছিল পুরনো ভিটে। ভিটের মালিক দুই ভাই উঠে গিয়েছিল খানিক দূরে। বছর খানেক আগে পুরনো ভিটেয় বসেছিল ভাড়া। জনা কয়েক রাজমিস্ত্রি থাকত সেখানে। সারা রাত জোরে জোরে বাজত গান।

Advertisement

এ টুকুই জানেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুক্রবার রাতে অবশ্য ডোমজুড়ের পূর্ব কোলড়া রায়পুরে বাঁশঝাড়ের পাশে ওই পরিত্যক্ত বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে পিস্তল, ম্যাগাজিন, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশ। বারুইপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, অস্ত্র কারখানা হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল ওই বাড়িটিকে। ওই বাড়ির দীর্ঘদিনের বাসিন্দা ছিল জিয়ারুল শেখ ও তার দাদা বুলবুল শেখ। শুক্রবার অস্ত্র বিক্রি করতে গিয়ে বারুইপুরের বমাল ধরা পড়ে জিয়ারুল। তারপর থেকেই বেপাত্তা বুলবুল। সে আবার কোলড়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাঁশঝাড়ের পিছনে পৈতৃক ভিটে ছিল জিয়ারুলদের। পরে তারা দু’টি আলাদা বাড়ি করে উঠে গিয়েছে গ্রামেরই আর এক প্রান্তে। সম্প্রতি গ্রামে আরও একটি বাড়ি তৈরি করছে দু’ভাই মিলে। এলাকায় তারা কেব্‌ল অপারেটর হিসাবে ব্যবসাও করত। এলাকায় রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, হাজার তিনেক টাকায় তাদের পৈতৃক ভিটে ভাড়া নিয়ে থাকে জনা কয়েক রাজমিস্ত্রি। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে মিস্ত্রিরাই রাতে গান শোনে। পুলিশের অনুমান, রাতেই অস্ত্র তৈরি হতো ওই বাড়িতে। আর তখনই যন্ত্রের শব্দ চাপা দিতে চালু করে দেওয়া হত টেপ রেকর্ডার। গান বাজত তারস্বরে।

Advertisement

শনিবার জিয়ারুল-বুলবুলের বাড়ি গিয়ে কথা বলা যায়নি পরিবারের কারও সঙ্গে। বাড়িতে কোনও পুরুষ সদস্যের দেখা মেলেনি। কথা বলতে চাননি মহিলারাও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে বুলবুল ওই এলাকায় সিপিএমের টিকিটে পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত হয়। স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য জানিয়েছেন, মাস ছয়েক আগে বুলবুল তৃণমূলে যোগ দেয়। সে কথা অস্বীকার করেছে তৃণমূল। কোলড়া-২ পঞ্চায়েতে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি অনিল সাধুখাঁ বলেন, ‘‘গত এক বছরে আমাদের অঞ্চলে কেউ তৃণমূলে যোগ দেননি। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। পুলিশের নজরদারি আরও বাড়ানো উচিত।’’

থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে এই অস্ত্র কারখানা রমরমিয়ে চলছিল প্রায় এক বছর ধরে। কিন্তু কী ভাবে? অবাক স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন