ডেঙ্গি হয়েছিল শেখ আনারুলের। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। প্লেটলেট দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু প্লেটলেট জোগাড় করতে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল পরিজনদের। আনারুল একটা উদাহরণ মাত্র। গত কয়েক মাসে শ্রীরামপুর মহকুমার বহু মানুষকে কলকাতার বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে ঘুরে তাঁদের ডেঙ্গি-আক্রান্ত পরিজনের জন্য রক্ত জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। সুযোগ বুঝে বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি চড়া দাম হাঁকিয়েছে।
শুধু ডেঙ্গির জন্য তৈরি হওয়া বিশেষ পরিস্থিতি নয়, গত বছরই গ্রীষ্মে বা পুজোর সময় রক্তের সঙ্কট নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই অবস্থা হয় যে কোনও সাধারণ নির্বাচনের সময়ও। ভবিষ্যতে যাতে এই সমস্যা না হয়, সে জন্য ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতাল। ‘রক্ত পৃথকীকরণ যন্ত্র’ (সেপারেটর মেশিন)-সহ ব্লাড ব্যাঙ্ক গড়তে পথে নেমেছে তারা। হাসপাতালের সম্পাদক অনিল সাহা বলেন, ‘‘রক্ত পৃথকীকরণ করা গেলে এক ইউনিট রক্তে চার ধরনের রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। জেলার সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কে উন্নত প্রযুক্তি না থাকায় এটা সম্ভব হচ্ছে না। এখানে ব্লাড ব্যাঙ্কটি হলে জেলার বহু মানুষ উপকৃত হবেন।’’
হুগলি জেলায় চারটি সরকারি হাসপাতালে (আরামবাগ, চন্দননগর, শ্রীরামপুর মহকুমা হাসপাতাল এবং চুঁচুড়া ইমামবাড়া সদর হাসপাতাল) ব্লাড ব্যাঙ্ক আছে। কিন্তু কোনও জায়গাতেই রক্ত পৃথকীকরণের ব্যবস্থা নেই। ফলে যে রক্ত ভেঙে আলাদা ভাবে চার জনকে দেওয়া সম্ভব, শুধুমাত্র পরিকাঠামোর অভাবে তা করা যায় না। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, সরকারি হাসপাতালে সেপারেটর যন্ত্র বসালে রক্তের আকাল অনেকটাই রুখে দেওয়া সম্ভব। এই কাজটাই করতে চাইছে, শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের পিয়ারাপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শ্রমজীবী হাসপাতাল। তাদের দাবি, রাজ্যের কোনও পঞ্চায়েত এলাকায় ব্লাড ব্যাঙ্ক নেই। তাও আবার সেপারেটর যন্ত্র-সহ। কিন্তু উন্নত পরিকাঠামোযুক্ত এই ব্লাড ব্যাঙ্ক গড়তে প্রায় এক কোটি টাকা খরচ। কোথা থেকে আসবে এই টাকা? হাসপাতালের কর্মকর্তা গৌতম সরকার বলেন, ‘‘নানা জায়গায় হাসপাতালের বন্ধু বা শুভাকাঙ্খীরা ছড়িয়ে আছেন। সবাই মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ জন্য চাঁদা তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী তিন মাসেই টাকা তুলে ফেলা যাবে।’’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি, রক্তদান শিবির থেকে প্রাপ্ত কার্ডের মাধ্যমে যোগান অনুযায়ী রক্ত মিলবে। আর যাঁদের রক্ত কেনার প্রয়োজন হবে, তাঁদের ক্ষেত্রেও কোনও ভাবে সরকারি মূল্যের থেকে দাম বেশি হবে না।