উদ্যোগ: চলছে রেলসেতু তৈরি। ছবি: সুব্রত জানা
রেলের দক্ষিণ-পূর্ব শাখায় ট্রেন চলাচলে দেরি নিয়ে বহুবারই অভিযোগ উঠেছে। লোকাল ট্রেনের দেরি নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন নিত্যযাত্রীরা। রেল সূত্রে খবর, এ সেই সমস্যা মেটাতে সাঁকরাইল থেকে সাঁতরাগাছি পর্যন্ত নতুন রেলপথের কাজ শুরু হয়েছে।
রেল দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন এই রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে আছে দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি রেলসেতু। সব মিলিয়ে খরচ হবে প্রায় ২২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি আর্থিক বছরেই ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রেল। দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রে খবর, সব কিছু ঠিক থাকলে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়ে যাবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে।
কেন এমন পরিকল্পনা?
দক্ষিণ পূর্ব রেল সূত্রের খবর, এই শাখার হাওড়া-খড়্গপুর হল ব্যস্ততম বিভাগ। বহন ক্ষমতার থেকে ৩০ শতাংশ বেশি ট্রেন চলে এই বিভাগে। সেই সমস্যা জটিল হয়ে ওঠে আন্দুলের পর থেকে। অতিরিক্ত লাইন না থাকায় সময়ে ট্রেনগুলি হাওড়া স্টেশনে ঢুকতে পারে না। উল্টোদিকে ডাউন ট্রেন দেরিতে ঢোকার জন্য আপ ট্রেন ছাড়তে দেরি হয়। সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ট্রেন চলাচল। তার উপরে সাঁতরাগাছি এবং শালিমারকে টার্মিনাল স্টেশন হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে আন্দুল থেকে নতুন লাইন পাতা না হলে সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মূলত সাঁতরাগাছি এবং শালিমারকে টার্মিনাল হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা হওয়ার পর থেকেই সাঁকরাইল থেকে সাঁতরাগাছি পর্যন্ত নতুন লাইন পাতার কথা ভাবা হয় বলে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তারা জানান।
২০১১ সালে ২২৪ কোটি টাকার বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি হয়। ২০১২ সালে সেটি রেল বোর্ড অনুমোদন করে। এর নাম দেওয়া হয় ‘নিউ ব্রডগেজ সাঁকরাইল-সাঁতরাগাছি লিঙ্ক প্রজেক্ট।’ ২০১৬ সাল থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তবে ওই বছরে বরাদ্দ করা হয় মাত্র ৫ কোটি টাকা। তা এক লাফে বেড়ে ১০০ কোটি হয়ে যায় চলতি আর্থিক বছরে।
‘নিউ ব্রডগেজ সাঁকরাইল-সাঁতরাগাছি লিঙ্ক প্রজেক্ট’-এর ছক।
প্রকল্পটির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি রেলসেতু। সাঁকরাইল স্টেশনের কাছে ডাউন লাইনের পাশ থেকে তৈরি হচ্ছে রেলসেতুটি। রেললাইন পার করে সেতুটি শেষ হবে আন্দুলে গিয়ে আপ লাইনের দিকে। তারপর আপ লাইনের সমান্তরাল নতুন লাইনটি পাতা হবে। এই লাইন শেষ হবে সাঁতরাগাছিতে। নতুন লাইন তৈরি হলে সাঁতরাগাছি এবং শালিমার স্টেশনে যেসব ট্রেনের যাত্রাপথ শেষ হবে সেই ট্রেনগুলিকে নতুন লাইন দিয়ে সাঁতরাগাছিতে নিয়ে যাওয়া হবে। ফলে পুরনো রেলপথের উপরে চাপ কম পড়বে। আন্দুল থেকে হাওড়ার মধ্যে ট্রেন চলাচলে দেরির সমস্যা অনেকটা মিটবে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘একদিকে সাঁতরাগাছি এবং শালিমারকে টার্মিনাল স্টেশন হিসাবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। সেই প্রকল্পের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে সাঁকরাইল-সাঁতরাগাছি নতুন ব্রডগেজ লাইন পাতার কাজ। কাজ শেষ হয়ে গেলে হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগে সময়ে ট্রেন চলাচলে সমস্যাই মিটে যাবে।’’