হাওড়ায় সুরক্ষা নিশ্ছিদ্র করতে প্রযুক্তি ব্যবহার

রেলের দাবি, শুধু নিরাপত্তাকর্মী বাড়িয়ে হাওড়া স্টেশনের নিরাপত্তা বাড়ানো সম্ভব নয়। কারণ হাওড়া স্টেশনে নিত্য দিন প্রায় ১০ লক্ষ যাত্রীর যাতায়াত। দিনের ব্যস্ত সময়ে যাত্রীসংখ্যা থাকে গড়ে ৮৮ হাজার।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৮:০৮
Share:

নিরাপত্তা বাড়াতে হাওড়া স্টেশনে (পুরনো ও নতুন কমপ্লেক্স মিলিয়ে) মোট ৫০০টি অত্যাধুনিক ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে।

হাওড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশনের নিরাপত্তা বাড়াতে এ বার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে রেল। গোটা স্টেশন চত্বর মুড়ে ফেলা হচ্ছে ইন্টিগ্রেটেড সিকিউরিটি সিস্টেম বা আইএসএস-এর মাধ্যমে। এই খাতে রেল প্রায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। হাওড়ার ডিআরএম মনু গোয়েল বলেন, ‘‘আগামী ৪-৫ মাসের মধ্যে এই আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কাজ শুরু করবে।’’

Advertisement

সম্প্রতি রেলপুলিশ অভিযোগ পায়, হাওড়া প্রান্তিক স্টেশন হওয়ায় একে ব্যবহার করে সোনা পাচার করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সোনার বাট-সহ এক ব্যক্তি ধরাও পড়ে। রেলের দাবি, শুধু নিরাপত্তাকর্মী বাড়িয়ে হাওড়া স্টেশনের নিরাপত্তা বাড়ানো সম্ভব নয়। কারণ হাওড়া স্টেশনে নিত্য দিন প্রায় ১০ লক্ষ যাত্রীর যাতায়াত। দিনের ব্যস্ত সময়ে যাত্রীসংখ্যা থাকে গড়ে ৮৮ হাজার। সেখানে শুধু রেলরক্ষী বা রেলপুলিশের পক্ষে সব যাত্রীর উপরে নজরদারি করা কার্যত অসম্ভব। তাই স্টেশনে নজরদারি বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়।

আইএসএস ব্যবস্থা কী?

Advertisement

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা স্টেশনে (পুরনো ও নতুন কমপ্লেক্স মিলিয়ে) মোট ৫০০টি অত্যাধুনিক ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে যাত্রীদের মুখ পরিষ্কার ভাবে চিহ্নিত করা যাবে। কেউ যদি নাশকতামূলক কাজ করে পালানোর চেষ্টা করে তাকে এই ক্যামেরার মাধ্যমে চিহ্নিত করা যাবে সহজে। রেলের যুক্তি, স্টেশনের প্রতিটি ইঞ্চি নজরে রাখতেই এত সংখ্যক ক্যামেরা লাগানো হবে। প্রতিটি ক্যামেরাই ২৪ ঘণ্টা চলবে।

স্টেশনে ইতিমধ্যে সার্ভার লাগানোর কাজ হয়ে গিয়েছে। তৈরি করা হয়েছে সার্ভার রুমও। তৈরি হচ্ছে আধুনিক কন্ট্রোল রুম। সেখানে থাকবে ৫০টির বেশি মনিটর। যার মাধ্যমে স্টেশনের প্রতিটি ক্যামেরার ছবি প্রতিনিয়ত নজরে রাখা হবে এবং রেকর্ডিং করা হবে। এর সঙ্গে থাকছে মোবাইল নম্বর চিহ্নিতকরণ ব্যবস্থা। কোনও যাত্রী চালু অবস্থায় মোবাইল নিয়ে স্টেশনে ঢুকলেই তার নম্বর টাওয়ার ধরে মনিটরে উঠে আসবে। সারা দিনে যদি কোনও একটি নম্বর বিভিন্ন সময়ে স্টেশনে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় আইএসএস ব্যবস্থার মাধ্যমে তা-ও চিহ্নিত করা যাবে সহজে। স্টেশনে যত যাত্রীই থাকুন না কেন তাঁদের সকলের মোবাইল নম্বর এই ব্যবস্থায় মনিটরে দেখা যাবে। তাই যে কোনও সন্দেহভাজনের গতিবিধির উপরেও নজরদারি করা যাবে সহজে।

রেলের তরফে জানা গিয়েছে, অধিকাংশ স্টেশনেই সীমানা প্রাচীর থাকে না। কারণ ট্রেন আসা যাওয়ার জন্য দু’দিক খোলা রাখতে হয়। যাত্রীরা যাতে সহজে আসা যাওয়া করতে পারেন তাই হাওড়ার মতো প্রান্তিক স্টেশনেও ৯টি গেট রাখা হয়েছে। হাওড়ার ডিআরএম জানান, আগেই যাত্রীদের ব্যাগ স্ক্যান করার জন্য ৪টি লাগেজ স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়েছে। যার মধ্যে তিনটি খারাপ হয়ে গিয়েছে। আর একটি মাঝে মধ্যেই খারাপ হয়। সারাতে গেলে এই মেশিনগুলির খরচ পড়বে প্রায় দেড় কোটি টাকা। ডিআরএম বলেন, ‘‘যাত্রীদের ব্যাগ পরীক্ষা করতে গেলে যেমন কয়েক জন নিরাপত্তা কর্মীকে বরাদ্দ করতে হয় আবার যাত্রীদেরও লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করতে হয়। এতে যাত্রীদের সমস্যা বাড়ে। এই স্ক্যানারের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’’

পূর্ব রেলের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘পাচারকারীরা হাওড়া স্টেশনকে করিডর হিসাবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ পাচ্ছি। অনেক সময় নানা রকম অপরাধ করে অপরাধীরাও ট্রেন ধরে পালিয়ে যায়। এ সব একমাত্র আধুনিক প্রযুক্তির দ্বারাই আটকানো সম্ভব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন