ভাটায় ছোটদের শিক্ষায় সরকারি হস্তক্ষেপ দাবি

স্কুলছুটদের নিয়ে যারা কাজ করে, সেই রাজ্য সর্বশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, শিশু শ্রমিকদের জন্য স্কুল চালায় শ্রম দফতর। এটা তাদের দেখার কথা। পক্ষান্তরে, শ্রম দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, ইটভাটায় শিশুশ্রম নিষিদ্ধ।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৯
Share:

বিপন্ন: ইট ভাটায় কাজের ব্যস্ত এক খুদে। ছবি: মোহন দাস

সংখ্যায় তারা কয়েক হাজার। ফি-বছর আসে হাওড়ার বিভিন্ন ইটভাটায়। ৯ মাস থাকে। পড়াশোনা শিকেয় ওঠে। তার পরে বাবা-মায়ের হাত ধরে ফিরে যায় নিজের রাজ্যে।

Advertisement

স্কুলছুট রুখতে সরকারি স্তরে নানা প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু ইটভাটাগুলিতে বিহার, ঝা়ড়খণ্ড-সহ নানা রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কোনও ব্যবস্থা নেই সরকারি স্তরে। নিজেদের রাজ্যের স্কুল থেকে ছেলেমেয়েদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন ওই শ্রমিকেরা। কিন্তু ফিরে গিয়ে আর সেই স্কুলে তাঁরা ভর্তি করাতে পারেন না। তাই অবিলম্বে সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ভাটা-শ্রমিকদের একটি সংগঠন।

স্কুলছুটদের নিয়ে যারা কাজ করে, সেই রাজ্য সর্বশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, শিশু শ্রমিকদের জন্য স্কুল চালায় শ্রম দফতর। এটা তাদের দেখার কথা। পক্ষান্তরে, শ্রম দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, ইটভাটায় শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। তাই সেখানে কোনও স্কুল চালানো সম্ভব নয়। এই দায়িত্ব নিতে হবে সর্বশিক্ষা দফতরকেই।

Advertisement

হাওড়ায় অন্তত ২০০টি ইটভাটা রয়েছে। ভাটার মরসুম চলে অক্টোবর থেকে জুন পর্যন্ত। ভিন্ রাজ্য থেকে হাজার হাজার শ্রমিক ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাজে আসেন। এই ৯ মাস ওই কচিকাঁচারা খেলে বেড়ায়। কোথাও কোথাও তাদের কাজেও লাগানো হয়। শুধু কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভাটাগুলিতে শিশুদের জন্য স্কুল চালানোর চেষ্টা করে। এ বার যেমন শুধু উদয়নারায়ণপুরের একটি ভাটায় স্কুল খুলতে পেরেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থাটির কর্ণধার মন্টু শী বলেন, ‘‘প্রতিটি ভাটায় ব্রিজ কোর্স চালু করা উচিত। যাতে এখানে পড়াশোনার পরে ওই কচিকাঁচারা ফিরে গিয়ে ফের নিজের গ্রামের স্কুলে ভর্তি হতে পারে।’’

ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রিজ কোর্স চালিয়ে গত বছর পর্যন্ত তারা বেশ কিছু পড়ুয়াকে বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি করাতে পেরেছে। তবে, এ বছর তাদের সেই পরিকল্পনা নেই। মন্টুবাবু বলেন, ‘‘গত বছর বিভিন্ন ভাটায় আমরা ১১টি স্কুল চালিয়েছিলাম। কিন্তু যথেষ্ট চাঁদা না-ওঠায় এ বছর উদয়নারায়ণপুরের স্কুলটি বাদ দিয়ে সব স্কুল বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’’ অন্য কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অভিযোগ, স্কুল খোলার কথা বললে অধিকাংশ ভাটা-মালিক ভাটায় ঢুকতে দেন না।

টিইউসিসি অনুমোদিত পশ্চিমবঙ্গ টালি এবং ইটভাটা মজদুর অ্যান্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক অসিত সাউ বলেন, ‘‘যে সব রাজ্য থেকে ওই শ্রমিকেরা আসেন, সেই সব রাজ্যের সরকারের সঙ্গে এ রাজ্যের সরকার যৌথ ভাবে ওই কচিকাঁচাদের পড়ানোর দায়িত্ব নিলে ভাল হয়।’’

উদয়নারায়ণপুরের ভাটাটির স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, চার মাসের বোন সোনালিকে পিঠে বেঁধে স্কুলের মেঝেতে বসে পড়াশোনা করছে রাঁচি থেকে আসা সাত বছরের কাজলকুমারী। তার মা-বাবা কাজে ব্যস্ত। স্কুল বলতে ভাটার একটি পরিত্যক্ত ঘর। সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ৪০। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্কুল চলে। স্থানীয় লোকজনই শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। ছোটদের তাঁরা ইংরেজি, অঙ্ক, হিন্দি শেখান। সবই যে কাজ চালানো গোছের, তা স্বীকার করেন শিক্ষকরা।

কাজলকুমারীরা তবু কিছু শেখার সুযোগ পাচ্ছে। বাকিদের ভাগ্যে সেটুকুও জুটছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন