অসচেতন: হেলমেট ছাড়াই চলছে তেল দেওয়া।আরামবাগের এক পেট্রল পাম্পে। নিজস্ব চিত্র
দু’বছর ধরে সরকারি প্রচারের বিরাম নেই। কিন্তু কাজ হল কই?
দুই জেলার প্রায় সব পেট্রল পাম্পেই বিনা হেলমেটে তেল মিলছে মোটরবাইক-স্কুটারে। সেখানে না আছে পুলিশ, না নজরদারি। পাম্প-মালিকরাও কোনও আপত্তি করছেন না। রবিবার, হুগলির পাণ্ডুয়া, মগরা, চণ্ডীতলা, তারকেশ্বর, সিঙ্গুর, হরিপাল, জাঙ্গিপাড়া-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা এবং হাওড়ার উলুবেড়িয়া, বাগনান, আমতা— সর্বত্র ঘুরে দেখা গেল, ছবিটা একই।
পথ নিরাপত্তার স্বার্থে দু’বছর আগে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নো হেলমেট, নো পেট্রল’— এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছিলেন। সক্রিয় হয়েছিল পুলিশ প্রশাসন। এমনকী, শাসকদল, বিভিন্ন ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও ঢাকঢোল পিটিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। প্রথম দিকে কাজও হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাস গড়াতেই ধীরে ধীরে বদলে গেল ছবিটা।
কেন? দুই জেলার অনেক পাম্প মালিকই বলছেন, ‘‘আমাদের স্থানীয় মানুষদের নিয়ে চলতে হয়। হেলমেট ছাড়া কাউকে তেল না-দিলে হামলা, অশান্তির আশঙ্কা সব সময় থাকে। রাতবিরেতে কোনও গোলমাল হলে পুলিশকে তো আর সঙ্গে সঙ্গে পাব না, দেখবে কে?’’ উলুবেড়িয়ার এক পাম্প–মালিক বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনের নির্দেশ মেনেই চলছিলাম। কিন্তু প্রতিদিন পাম্পে ঝামেলা লেগে থাকত। পুলিশকে জানিয়েও লাভ হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি একজন করে পাম্পে নজরদারি চালান, তবে আমরাও বিনা হেলমেটে তেল দেওয়া বন্ধ করব।’’
নানা পেট্রল পাম্পে এখন ‘নো হেলমেট, নো পেট্রল’ ব্যানারে ধুলো জমছে। আর নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখানোর এই প্রবণতা ডেকে আনছে বিপদ। দুই জেলাতেই মোটরবাইক দুর্ঘটনা এবং তার জেরে মৃত্যু অব্যাহত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হতাহতদের মাথায় হেলমেট থাকে না বলে পুলিশই দাবি করছে। দিনকয়েক আগেই পাণ্ডুয়ার মারসিটে বিনা হেলমেটে দুই বাইক-আরোহী এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা মারে। মৃত্যু হয় ওই সাইকেল আরোহীর। দুর্ঘটনায় জখম এক বাইক আরোহী এখনও চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জুন মাসের গোড়ায় তারকেশ্বরের পিয়াসারায় অহল্যাবাই রোডে প্রসাদ ঘোষও মোটরবাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন। তাঁরও হেলমেট ছিল না। তার আগে ২১ মে ধনেখালির নারায়ণপুরে তারকেশ্বর-বর্ধমান রোডে লরির সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় এখ বাইক আরোহীর। এমন উদাহরণ আরও অজস্র রয়েছে।
কেন কয়েক মাসের মধ্যে সরকারি উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়ল?
সাধারণ মানুষের একাংশ মনে করছেন, পুলিশের নজরদারির অভাব। তাঁদের মতে, শুরুর দিকে পুলিশ যতটা সক্রিয় ছিল, কয়েক মাস পেরনোর পরে তা কমে যায়। এমনকী, রাস্তাতেও তখন বিনা হেলমেটের বাইক আরোহীদের জরিমানা করা হয়েছে। এখন সেই উদ্যোগ কমে গিয়েছে।
এ কথা মানতে চাননি দুই জেলার পুলিশ কর্তারা। হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈনের দাবি, ‘‘পথ নিরাপত্তায় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে আমরা লাগাতার প্রচার করছি। হেলমেট ছাড়া তেল না-দেওয়ার কথাও বলা আছে। এ নিয়ে প্রচারও করছি।’’
হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তাও বলেন, ‘‘বিনা হেলমেটের বাইক-আরোহীদের আমরা জরিমানা করছি। পাম্প মালিকদেরও বিনা হেলমেটে তেল না দিতে নিষেধ করা হয়েছে। নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।’’