jute mills

স্তব্ধ জুটমিল, ধাক্কা ছোট শিল্পেও

বন্‌ধের জেরে এ দিন গ্রামীণ হাওড়ায় যে সামগ্রিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়, তার আঁচ পড়ে শিল্পাঞ্চলেও। সকাল থেকেই জুটমিলগুলির সামনে পিকেটিং করেন ধর্মঘটপন্থীরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২০ ০১:১০
Share:

চেঙ্গাইলের জুটমিলের সামনে ভিড়। (উপরে)। জোর করে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে উলুবেড়িয়ার বাণীতলায়। —নিজস্ব চিত্র।

হাওড়ায় ১৩টি জুটমিলের মধ্যে গ্রামীণ এলাকায় রয়েছে পাঁচটি (সাঁকরাইল, বাউড়িয়া এবং চেঙ্গাইল মিলিয়ে)। বন্‌ধ থাকা সত্ত্বেও প্রতিটিই খুলেছিল বৃহস্পতিবার। কিন্তু চেঙ্গাইলেরটি বাদ দিলে বাকি চারটি জুটমিলের শ্রমিকদের সিংহভাগ না-আসায় উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ থাকে। চেঙ্গাইলের মিলটিতে সকালের দিকে কিছু শ্রমিক ঢোকেন। বেলার দিকে আর কেউ আসেননি।

Advertisement

উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুরে সরকারি শিল্পতালুকের সিংহভাগ কারখানাও বন্ধ ছিল একই কারণে। জেলার অন্যতম শিল্পাঞ্চল হিসাবে গত কয়েক বছরে উঠে এসেছে ডোমজুড়ের আলমপুর, জঙ্গলপুর এবং সাঁকরাইলের ধূলাগড়ি, আড়গড়ি, সাঁকরাইলের বিভিন্ন বেসরকারি শিল্পতালুক। মুম্বই রোডের ধারে গড়ে ওঠা এইসব শিল্পতালুকে অসংখ্য ছোট কারখানা আছে। লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করেন। এ দিন কয়েকটি কারখানার জরুরি বিভাগে কিছু শ্রমিক কাজ করেছেন। কিন্তু বেশিরভাগ কারখানাতেই শ্রমিকেরা আসেননি। ফলে, সেই সব কারখানায় কাজ বন্ধ থাকে।

অর্থাৎ, বন্‌ধের জেরে এ দিন গ্রামীণ হাওড়ায় যে সামগ্রিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়, তার আঁচ পড়ে শিল্পাঞ্চলেও। সকাল থেকেই জুটমিলগুলির সামনে পিকেটিং করেন ধর্মঘটপন্থীরা। চেঙ্গাইলের জুটমিলটিতে শ্রমিকদের আসাকে কেন্দ্র করে ধর্মঘটপন্থীদের সঙ্গে কিছু তৃণমূল কর্মীর বাদানুবাদ হয়। তবে, তা বেশি দূর গড়ায়নি।

Advertisement

ধর্মঘটপন্থীদের অভিযোগ, কয়েকটি ছোট কারখানা কর্তৃপক্ষ ভয় দেখিয়ে শ্রমিকদের আনার চেষ্টা করেন। তৃণমূলপন্থী শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ভয় দেখানোর অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

বন্‌ধে তাঁদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন জুটমিল-মালিকেরা। তাঁদের বক্তব্য, কাঁচা পাটের দাম বাড়তে থাকায় জুটমিল চালানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। তার উপরে উৎপাদন বন্ধ থাকায় সঙ্কট বাড়ল।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার অবশ্য দাবি করেছেন, বন্‌ধে শ্রমিকেরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শামিল হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা বুঝেছেন, কেন্দ্রের জনবিরোধী শ্রম আইনে তাঁরা স্বস্তিতে থাকবেন না। তাঁরা ভাল না থাকলে শিল্প ক্ষেত্রে তার প্রভাব হবে সূদূরপ্রসারী। এখনই এর প্রতিবাদ করা না হলে শ্রমিক-মালিক— সবাই অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বেন।’’ শিল্পাঞ্চলে বন্‌ধ সফল করার জন্য শ্রমিকদের অভিনন্দনও জানিয়েছেন বিপ্লববাবু। সাঁকরাইল শিল্পাঞ্চল এলাকার কংগ্রেস নেতা অলোক কোলের দাবি, ‘‘শ্রমিকদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। তাই শিল্পাঞ্চলে বন্‌ধ সফল হয়েছে।’’

তৃণমূলপন্থী শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি অবশ্য সিপিএম এবং কংগ্রেসের ওই দাবি মানতে নারাজ। সংগঠনের জেলা সভাপতি অরূপেশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা মনেপ্রাণে এই বন্‌ধ সমর্থন করেননি। যানবাহনের সমস্যা ছিল। তাই তাঁরা কাজে যোগ দিতে পারেন‌নি। যাঁরা আসতে পেরেছেন, তাঁরা কাজে যোগ দিয়েছেন। ফলে, অনেক কারখানা চলেছে। যাঁরা কাজে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা বুঝেছেন, বন্‌ধ করে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন