ধরা পড়েনি কোনও অভিযুক্তই

ইমতিয়াজের দেহ গ্রামে আনতে বাধা

মঙ্গলবার রাতে উলুবেড়িয়ার বাহির গঙ্গারামপুরে নিজের ভাড়াবাড়ির সামনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন ইমতিয়াজ। তাঁর স্ত্রী জাহানারা শেখ ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০১:১৩
Share:

অকুস্থল: ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: সুব্রত জানা

পেরিয়ে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু বুধবার রাত পর্যন্ত জয়পুরের ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা ইমতিয়াজ শেখ খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের কাউকে পুলিশ ধরতে পারেনি। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ইমতিয়াজ খুন হন বলে অভিযোগ। ময়নাতদন্ত শেষে এ দিন গ্রামে দেহ আনতে গিয়ে গ্রামবাসীদের একাংশের বাধা পান নিহতের পরিবারের লোকেরা। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ানোয় শেষ পর্যন্ত পুলিশ দেহটি উলুবেড়িয়ায় সর্বসাধারণের ব্যবহার্য কবরখানায় কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করে।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে উলুবেড়িয়ার বাহির গঙ্গারামপুরে নিজের ভাড়াবাড়ির সামনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন ইমতিয়াজ। তাঁর স্ত্রী জাহানারা শেখ ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান। ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে গত বছর ২১ অগস্ট স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ শাজাহান এবং তাঁর ভাই শেখ লালচাঁদকে খুনের অভিযোগ ওঠে। দীর্ঘদিন ‘ফেরার’ থাকার পরে ইমতিয়াজ মাসখানেক আগে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সপ্তাহখানেক আগে জামিন পান। তাঁকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েতের বর্তমান তৃণমূল প্রধান সাবিনা বেগমের স্বামী বাপি মল্লিক-সহ পাঁচ জন।

এ দিন যাতে ইমতিয়াজের দেহ গ্রামে না-আসে, সে জন্য বিক্ষোভ দেখান একদল গ্রামবাসী। নিহত শাজাহান এবং লালচাঁদের অনুগামীরাই ওই বিক্ষোভ দেখান বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। পুলিশ ইমতিয়াজের পরিবারকে জানায়, দেহ তাঁরা যেন ঘোড়াবেড়িয়ায় না-নিয়ে যান। এতে ক্ষুব্ধ ইমতিয়াজের ভাই শেখ শাহ আলম বলেন, ‘‘একেই পুলিশ খুনিদের ধরতে পারল না, তার উপরে জন্মস্থানে দাদা কবর পেলেন না। পুলিশ প্রহরায় দাদার দেহ গ্রামে নিয়ে যাওয়া যেত। শাসকদলের চাপের কাছে পুলিশ নতিস্বীকার করল।’’

Advertisement

গ্রামীণ জেলা পুলিশের দাবি, অশান্তি এড়াতেই দেহ কবর দেওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়েই যে এই খুনের ঘটনা, তা স্বীকার করেন জেলা পুলিশ কর্তাদের একাংশও। তাঁদের বক্তব্য, প্রাথমিক তদন্তে খুনের কিছু উদ্দেশ্য পাওয়া গিয়েছে। তা মূলত রাজনৈতিক। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তবে, গ্রামীণ জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলক রায়ের দাবি, ‘‘এইসব অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।’’

গ্রামবাসীদের একাংশ এবং তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত ইমতিয়াজ ছিলেন ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েতের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। তখন তিনি কংগ্রেস করতেন। তাঁর স্ত্রী জাহানারা ওই বছর নির্বাচনে জিতে প্রধান হন। পরের বছর ইমতিয়াজ তৃণমূলে যোগ দেন। এরপরেই তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁর স্ত্রী জিতলেও প্রধান হন বাপি মল্লিকের স্ত্রী সাবিনা। এর মধ্যে এলাকায় বালা এবং বিলু নামে দুই দুষ্কৃতীর উত্থান ঘটে। সম্পর্কে তারা দুই ভাই। তারা তৃণমূলের মদতেই তোলাবাজি করত বলে অভিযোগ। পুলিশির অভিযানে তারা এলাকাছাড়া হয়। বালা-বিলু চলে যাওয়ায় এলাকায় রাজনৈতিক কর্তৃত্ব কে করবেন তা নিয়ে ইমতিয়াজ, বাপি মল্লিক এবং শেখ শাজাহানের মধ্যে বিবাদ বাধে। অভিযোগ, ইমতিয়াজের নেতৃত্বেই শেখ শাজাহান এবং লালচাঁদকে খুন করা হয়। বালা-বিলুও ওই জোড়া খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত।

জামিন পেয়ে ইমতিয়াজ বাহির গঙ্গারামপুরে ঘরভাড়া করে স্ত্রী এবং তিন ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। তাঁর স্ত্রী জাহানারার অভিযোগ, ‘‘স্বামী দীর্ঘদিন এলাকা ছাড়া থাকায় বাপি একা চুটিয়ে রাজত্ব করছিল। স্বামী জামিন পাওয়ায় বাপি এলাকায় তার প্রভাব কমার আশঙ্কা করছিল। সেই ভয়েই ও স্বামীকে খুন করে।’’ গ্রামবাসী এবং তৃণমূল কর্মীদের একাংশও জাহানারার বক্তব্যে সায় দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন