কামান দাগার দাবি তুলেছিলেন দু’এক জন কাউন্সিলর। কিন্তু শ্রীরামপুরে ডেঙ্গি প্রতিরোধে আপাতত বেশি করে তেল এবং ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোরই সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন।
জ্বরের উপসর্গ নিয়ে শনিবারও অনেকে সরকারি হাসপাতাল বা ফিভার ক্লিনিকে ভিড় করেছেন। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ইতিমধ্যেই শ্রীরামপুরে ডেঙ্গি মহামারির আকার নিয়েছে বলে ঘোষণা করেছে। এই পরিস্থিতিতে শনিবার শ্রীরামপুর পুরসভায় জরুরি বৈঠক হয়। কাউন্সিলরদের সঙ্গে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের সহ-অধিকর্তা (ম্যালেরিয়া) অধীপ ঘোষ, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বিধায়ক সুদীপ্ত রায়, শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক রজত নন্দা এবং পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়। সেখানেই কামান দাগার দাবি উড়িয়ে ওয়ার্ডগুলিতে বেশি পরিমাণ মশা মারার তেল এবং ব্লিচিং পাউ়ডার ছড়ানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও জোরকদমে নামা হবে। মশার লার্ভা মারার তেলের জোগান যাতে পর্যাপ্ত থাকে, তা নিশ্চিত করা হবে।’’ বিধায়ক জানান, এত দিন জ্বরে আক্রান্তদের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য চুঁচুড়া জেলা হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছিল। রিপোর্ট আসতে তিন-চার দিন সময় লাগছিল। এ বার রিপোর্ট মিলবে নমুনা সংগ্রহের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই। নাইসেডেরও সাহায্য নেওয়া হবে।
এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘ডেঙ্গির ভাইরাস বহনকারী এডিস ইজিপ্টাই মশা ছাতা, জুতো বা পোশাকের ভিতরে বিশ্রাম করে। ফলে তাদের খুঁজে নিধন করা সহজ নয়। সেই জন্যই লার্ভা নিধনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। যাতে নতুন মশা না জন্মায়।’’
বস্তুত, বেশ কিছুদিন ধরেই জ্বরের প্রকোপ ছড়ায় শ্রীরামপুরে। অনেককে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিহ্নিত হয় ডেঙ্গিও। এর মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যুও হয়। দু’জনেরই প্লেটলেট কমে গিয়েছিল। যা ডেঙ্গির অন্যতম ইঙ্গিতবাহী হলেও মেডিক্যাল রিপোর্টে মৃত্যুর অন্য কারণ উল্লেখ করা হয়। কিন্তু শ্রীরামপুরের সামগ্রিক পরিস্থিতি চিন্তার ভাঁজ বাড়ায় স্বাস্থ্যকর্তাদের। তার পরেই শহরে ডেঙ্গিকে মহামারি বলে ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু এলাকার চিকিৎসক-বিধায়ক সুদীপ্তবাবুর দাবি, স্বাস্থ্য ভবনের তরফে আদপেই ওই দাবি করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘দু’-তিনটি ওয়ার্ডে কিছু সংখ্যক মানুষের ডেঙ্গি হয়েছে। হাসপাতালে ১৫ জনের মতো ভর্তি আছেন। তাঁদের চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থাই করা হচ্ছে। এখানে ডেঙ্গিতে কারও মৃত্যু হয়নি। আর মহামারির কথাও কোনও স্বাস্থ্যকর্তা বলেননি।’’
বিরোধীরা মনে করছে, পুরসভা বা প্রশাসনের তরফে পরিস্থিতির গুরুত্ব কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সুমঙ্গল সিংহের দাবি, ‘‘বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডেঙ্গি ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছে। অথচ, তা মানা হচ্ছে না।’’