টিকিট ‘বাতিল’, জানেনই না যাত্রী

গত ২৬ জুন শ্রীরামপুরের চাতরার বাসিন্দা প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় স্ত্রী অনুরাধাদেবী, ভাই সন্দীপ, ভাইয়ের স্ত্রী পূর্ণিমা এবং বছর দশেকের ভাইঝি প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে বেঙ্গালুরুতে যান ডাক্তার দেখাতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেওড়াফুলি শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ০১:১৩
Share:

হাতে বৈধ টিকিট। অথচ রেলের তালিকায়— ‘টিকিট বাতিল’। যার জেরে ভিন্‌ রাজ্য থেকে ফেরার সময় গভীর রাতে এক বালিকা-সহ পুরো পরিবারকে মাঝপথে নামিয়ে দেওয়া হল। হুগলির শ্রীরামপুরের ওই পরিবারের তরফে রেল দফতরে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।

Advertisement

গত ২৬ জুন শ্রীরামপুরের চাতরার বাসিন্দা প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় স্ত্রী অনুরাধাদেবী, ভাই সন্দীপ, ভাইয়ের স্ত্রী পূর্ণিমা এবং বছর দশেকের ভাইঝি প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে বেঙ্গালুরুতে যান ডাক্তার দেখাতে। ফেরার টিকিট ছিল মাইসোর স্টেশন থেকে গত রবিবার রাত সাড়ে ১২টায় (২২৮১৮ ডাউন মাইসোর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে)। হাওড়ার পৌছনোর কথা ছিল মঙ্গলবার বেলা পৌনে তিনটেয়।

প্রদীপবাবু জানান, ৪ মে শেওড়াফুলি থেকে তিনি এসি থ্রি-টায়ারের টিকিট কেটেছিলে‌ন। ফেরার দিন‌ রাত ১০টা নাগাদ মাইসোর স্টেশনে পৌঁছে মোবাইলে রেলের অ্যাপে দেখেন, পাঁচটির মধ্যে চারটি টিকিট ‘ক্যান্সেল অর মডিফিকেশন’ দেখাচ্ছে। অনুসন্ধান কাউন্টার থেকে বলা হয়, টিকিটগুলি নিশ্চয়ই ‘উঁচু শ্রেণিতে মডিফিকেশন’ হয়েছে। তাঁরা নিশ্চিন্তে ট্রেনে বসতে পারেন। প্রদীপবাবুরা সকলে নির্দিষ্ট আসনে গিয়ে বসেন। কিছুক্ষণ পরে দু’জন এসে দাবি করেন, আসনগুলির মধ্যে দু’টি তাঁদের। এ নিয়ে দু’পক্ষের বচসা বাধে। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘লোকদু’টি মারমুখী হয়ে উঠে। টিটিই-কে বলি। উনি এসি-টু টায়ারের টিটিই-র কাছে যেতে বলেন। কিন্তু ওই কামরার টিটিই-ও জানান, সেখানে আমাদের বসার ব্যবস্থা নেই।’’

Advertisement

এর পরে এসি-থ্রি টায়ারের টিটিই কন্ট্রোল রুমে কথা বলে তাঁদের জানান, ৬মে শেওড়াফুলি থেকে ওই চারটি টিকিট বাতিল করা হয়। শুনে তাঁরা আকাশ থেকে পড়েন। টিটিই-র কাছে অভিযোগ লেখান। কিন্তু তাতে কোনও ফল হয়নি। রাত তিনটে নাগাদ ‘বিনা টিকিটের’ যাত্রী হিসেবে বেঙ্গালুরু স্টেশনে তাঁদের ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘আমাদের তখন‌ অসহায় অবস্থা। টাকা শেষ। এক বন্ধুর মাধ্যমে এক জনের থেকে টাকা ধার করে হোটেলে দু’দিন কাটাই। গত বুধবার ট্রেনে চেপে বৃহস্পতিবার বাড়ি পৌঁছই। যা অভিজ্ঞতা হল বলার নয়।’’

শুক্রবার শেওড়াফুলি স্টেশন ম্যানেজারের কাছে গোটা বিষয়টি জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার টিকিট কে, কী ভাবে বাতিল করল, কেন টিকিট বাতিলের তথ্য মোবাইল মেসেজ এলা না, টিকিট বাতিলের টাকা কোথায় গেল— রেল প্রশ্নগুলোর উত্তর দিক।’’ তিনি বলেন, ‘‘ওই সব দেখে ভাইঝি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমাদের মানসিক যন্ত্রণা এবং হয়রানির দায় রেল কর্তৃপক্ষ নেবেন?

শেওড়াফুলি রিজার্ভেশন কাউন্টার সূত্রের খবর, দালাল চক্রের জন্য এমনটা হয়েছে। চক্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে মাস দেড়েক আগে এক আধিকারিককে সাসপেন্ড করা হয়। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন