এত বন্দুক আসছে কোথা থেকে

শিল্পাঞ্চলে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য বাগে আনতেই ৯টি থানাকে নিয়ে চন্দননগর কমিশনারেট গঠিত হয়। কিন্তু তার পরেও মাস আটেক আগে ভদ্রেশ্বরের তৎকালীন উপপ্রধান মনোজ উপাধ্যায় গুলিতে খুন‌ হন। এর পরে তখনকার পুলিশ কমিশনার পীযূষ পাণ্ডেকে সরিয়ে অজয় কুমারকে দায়িত্ব দেয় নবান্ন। কিন্তু গত মে মাসে গুড়াপে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে এসে হুগলির আইনশৃঙ্খ‌লা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশকে সতর্ক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতির খুব একটা হেরফের হয়নি বলে অভিযোগ।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০৩:২৪
Share:

অকুস্থল: শুক্রবার সকালে ধৃত সুলতানকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করল পুলিশ

কোন্নগরের যুবতী শুভলগ্না চক্রবর্তী খুনে যে আগ্নেয়াস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটি শুক্রবার উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, সেটি স্বয়ংক্রিয় সেভেন এমএম পিস্তল।

Advertisement

ক’দিন আগেই বিশ্বকাপের খেলা নিয়ে বচসায় চুঁচুড়ার খাদিনা মোড়ে গুলিতে খুন হয়েছিলেন এক যুবক। সেটি ছিল ওয়ান শটার।

সম্প্রতি ডানকুনিতে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে টাকা লুঠ করে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। মাসদেড়েক আগে কোন্নগরের কালীতলা এলাকায় নির্মীয়মাণ আবাসনের অফিসে তাণ্ডব চালায় সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। ওই আবাসনে বোমাও পড়ে।

Advertisement

পর পর এই সব ঘটনায় ফের হুগলি শিল্পাঞ্চলে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমা নিয়ে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন। কোথা থেকে এত আগ্নেয়াস্ত্র আসছে, সে প্রশ্ন যেমন জোরালো হচ্ছে, তেমনই পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বাড়ছে ক্ষোভ।

দিনকয়েক আগেই ঘটা করে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের প্রথম বর্ষপূর্তি পালিত হয়েছে। পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার দাবি করেছেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের ধরপাকড় জারি রয়েছে। অস্ত্র উদ্ধার করতে নিয়মিত অভিযানও চলছে। অস্ত্রের আমদানি অনেক কমেছে।’’ কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, অস্ত্রের আমদানি আটকাতে কমিশনারেট আদৌ কাজের কাজ করে উঠতে পারেনি। রমেশ মাহাতো থেকে নেপু গিরি, চিকুয়া হুলোদের মতো বাঘা দুষ্কৃতীরা জেলে থাকতেও অস্ত্রের ঝনঝনানি কমেনি।

শিল্পাঞ্চলে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য বাগে আনতেই ৯টি থানাকে নিয়ে চন্দননগর কমিশনারেট গঠিত হয়। কিন্তু তার পরেও মাস আটেক আগে ভদ্রেশ্বরের তৎকালীন উপপ্রধান মনোজ উপাধ্যায় গুলিতে খুন‌ হন। এর পরে তখনকার পুলিশ কমিশনার পীযূষ পাণ্ডেকে সরিয়ে অজয় কুমারকে দায়িত্ব দেয় নবান্ন। কিন্তু গত মে মাসে গুড়াপে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে এসে হুগলির আইনশৃঙ্খ‌লা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশকে সতর্ক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতির খুব একটা হেরফের হয়নি বলে অভিযোগ।

বৃহস্পতিবারের কোন্নগরের খুনের ঘটনাটিতে অভিযুক্ত সেই অর্থে দুষ্কৃতী নয়। তবু সে কোথা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র পায় এ প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ আধিকারিকরাও মানছেন, বেশ কিছু ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকারী আক্ষরিক অর্থে দুষ্কৃতী নয়। কোন্নগরের এক প্রৌঢ় বলেন, ‘‘সেই অর্থে দুষ্কৃতী নয়, এমন মান‌ুষের হাতে কী ভাবে অস্ত্র পৌঁছয়, সেটাই চিন্তার।’’

কোন পথে আসছে অস্ত্র?

পুলিশের একাংশের বক্তব্য, কয়েক বছর আগেও রিষড়া-শ্রীরামপুরে অস্ত্র কারবারিদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র কেনা যেত। বিহারের মুঙ্গের থেকে অস্ত্র কিনে তারা এখানে বেচত। অস্ত্র কারখানারও হদিস মিলেছিল ভদ্রেশ্বরে। এখন এখানে অস্ত্র কেনাবেচা তেমন চলছে না। এখন সরাসরি মুঙ্গের থেকেই চোরাগোপ্তা ভাবে অস্ত্র আনা হচ্ছে। তার দামও বেড়েছে। যে ওয়ান শটারের দাম তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারের মধ্যে ঘোরাফেরা করত, এখন তা অন্তত পাঁচ হাজার টাকা। ৩০-৩৫ হাজার টাকায় মিলবে আধুনিক সেভেন এমএম, নাইন এমএম-এর মতো ভয়ঙ্কর অস্ত্র।

কোন্নগরের অভিযুক্ত যুবকটি কোথা থেকে আগ্নেয়াস্ত্রটি পেল, সেই খোঁজ চলছে জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘বাইরে থেকে দুষ্কৃতীরা হয়তো অস্ত্র কিনছে। তবে এটা রোখার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

শুক্রবার দুপুরে কোন্নগরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শুভলগ্নার ঘরের বাইরের দেওয়ালে রক্তের দাগ। দরজার সামনে তাঁর বালিশ, ওড়না পড়ে। ঘরে মেঝেতে রক্তের দাগ শুকিয়ে কালো হয়ে গিয়েছে। আতঙ্কের ছাপ পরিবারের সকলের মুখে। শুভলগ্নার নিজের ভাই কর্মসূত্রে বিদেশে থাকেন। তিনি তখনও এসে পৌঁছননি। এক তুতো ভাই বলেন, ‘‘পুলিশ ওই ছেলেটাকে ধরেছে ঠিকই। কিন্তু আমাদের ভয় লাগছে। এ জন্য আবার হামলা হবে না তো?’’

ঘটনায় শোরগোল পড়েছে এলাকাতেও। শুভলগ্নার সঙ্গে অভিযুক্ত সুলতানের মেলামেশার কথা এলাকাবাসী জানতেন। কিন্তু এমন পরিণতি তাঁরা মানতে পারছেন না। সুলতানের বাবা শেখ ইসলাম আলি বলেন, ‘‘ছেলে অন্যায় করেছে। আমি কোনও আইনজীবী দেব না।’’

এই খুনের প্রতিবাদে এবং জেলা জুড়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ তুলে এ দিন সন্ধ্যায় কোন্নগরে স্টেশন রোডে পথসভা করে সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন