বেহাল নিকাশিতে ভোগান্তি শ্রীরামপুরে

পূর্ব পেরেছে, এখনও পারেনি পশ্চিম

একটু বৃষ্টি হলেই কার্যত ডুবে যায় মাহেশের সঙ্গে মল্লিকপাড়া বা প্রভাসনগরের সংযোগকারী রেল লাইনের আন্ডারপাস। তখন অনেকটা ঘুরপথে অথবা ঝুঁকি নিয়ে রেল লাইন পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয় স্কুলকলেজের পড়ুয়া থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলকেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৬
Share:

বৃষ্টিতে এমনই অবস্থা হয় শ্রীরামপুর এলাকার। ফাইল চিত্র।

একটু বৃষ্টি হলেই কার্যত ডুবে যায় মাহেশের সঙ্গে মল্লিকপাড়া বা প্রভাসনগরের সংযোগকারী রেল লাইনের আন্ডারপাস। তখন অনেকটা ঘুরপথে অথবা ঝুঁকি নিয়ে রেল লাইন পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয় স্কুলকলেজের পড়ুয়া থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলকেই।

Advertisement

শুধু ওই আন্ডারপাসই নয়, গত বছর বর্ষায় রেল লাইনের পশ্চিমপাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সমস্যা মেটাতে দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী এবং আধিকারিকদের কাছে আবেদন নিবেদন করছিল শ্রীরামপুর পুরসভা। অবশেষে ওই এলাকার জল দাঁড়ানোর সমস্যার সমাধানে একটি প্রকল্প অনুমোদন করে সংশ্লিষ্ট দফতর। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই জায়গায় একটি ‘লিফ্টিং’ স্টেশন করা হবে। পাম্পের মাধ্যমে জমা জল দ্রুত তুলে ফেলা হবে।

প্রসঙ্গত, আন্ডারপাসের পশ্চিমে রয়েছে নতুন মাহেশ, তারাপাপুকুর, মল্লিকপাড়া, প্রভাসনগরের মতো জনবহুল এলাকা। রয়েছে শ্রীরামপুর স্টেডিয়াম। সামান্য দূরেই জিটি রোড। রুজি-রুটির কারণে প্রতিদিন অনেক মানুষকে ওই রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু বর্ষার সময় সকলকেই নাজেহাল হতে হয় ওই পথ চলতে। আন্ডারপাসে জল জমা আটকাতে বছর কয়েক আগে একটি সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হয়। ওই এলাকায় ‘সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে’র জীর্ণ পাইপ সারানো হয়েছে।

Advertisement

কিন্তু এত সব করেও সমস্যা মিটছে কই?

এক সময় পশ্চিমপাড়ের মতো অবস্থা ছিল স্টেশনের পূর্বপাড়ে। ওই পাড়ের নেতাজি সুভাষ অ্যাভিনিউ, বিপিদে স্ট্রিট, কেএমশা স্ট্রিটের মতো রাস্তাতেও অল্প বৃষ্টিতেই জল দাঁড়িয়ে যেত। সহজে জল নামতে চাইত না। বছর খানেক ধরে অবশ্য ওই এলাকার জমা জল দ্রুত নেমে যাচ্ছে।

পূর্বপাড়ের এই সমস্যা কী করে মিটল? পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, মাটির নীচে নিকাশি ব্যবস্থা ভাল ভাবে পরিষ্কার করাতেই সমস্যা মিটেছে। পুরসভার চেয়ারম্যন ইন কাউন্সিল গৌরমোহন দে জানান, বর্ষায় যাতে ভুগতে না হয়, সে জন্য এখন থেকেই জিটি রোড, জিতেন্দ্রনাথ লাহিড়ী রোড, হাসপাতাল ও চটকল এলাকা-সহ নানা জায়গায় বড় নিকাশি নালাগুলি পরিষ্কার করার কাজ শুরু হয়েছে।

কিন্তু পশ্চিমপাড়ের নিকাশি ব্যবস্থা সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, তারাপুকুরে একটি ওষুধ কারখানার সামনে দিয়ে যাওয়া জলাশয় নিকাশি ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম ছিল। জবরদখল হয়ে সেটি এখন কার্যত অস্তিত্ব হারিয়েছে। যেটুকু অংশ ফাঁকা রয়েছে তা আগাছায় ভর্তি। ফলে এলাকার সমস্ত জ‌ল রেল লাইনের দিকে চলে যাচ্ছে। পুর-কর্তৃপক্ষের যুক্তি, পশ্চিমপাড়ের অনেক জায়গাই নিচু। সে কারণে জল জমে থাকে। বাস্তব বলছে অন্য কথা। ৫, ৬, ২৭, ২৮ এবং ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে কমবেশি এই সমস্যা রয়েছে। নতুন মাহেশ, সোসাইটি মাঠ, প্রভাসনগর ও তারাপুকুরের একাংশে সমস্যা বেশি। ওই এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজা পুর-কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বছর তিনেক আগে এই জায়গায় একটি লিফ্টিং স্টেশনের জন্য পুর দফতরে আবেদন করা হয় পুরসভার তরফে। এ নিয়ে সরকারের কাছে বহুবার তদ্বিরও করেন পুর-কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় এ ব্যাপারে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে দেখা করেন। নিকাশি সমস্যার কথা স্বীকার করে অমিয়বাবু বলেন, ‘‘পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর এই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্প তৈরিতে ১১ কোটি টাকারও বেশি দেবে রাজ্য। প্রকল্পটি তৈরি হলে পশ্চিমপাড়ের দীর্ঘদিনের নিকাশি সমস্যা পাকাপাকি সমাধান হয়ে যাবে।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, লিফ্টিং স্টেশনের মাধ্যমে জমা জল তুলে শোধনের পরে গঙ্গায় ফেলা হবে। খালের প্রসঙ্গে পুরপ্রধান অমিয়বাবু জানান, রেল লাইনের পশ্চিমপাড়ে নতুন করে একটি খাল তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে পুরসভার।

পুরসভা যতই আশ্বাস দিক না কেন, দ্রুত এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাইছেন এলাকাবাসী। বিবিঘোষ রোডের বাসিন্দা বিক্রম মণ্ডল বলেন, ‘‘বৃষ্টি হলেই প্যান্ট গুটিয়ে, জুতো হাতে করে চলতে হবে এটাই ছিল ভবিতব্য। নেহাত প্রয়োজন না হলে কেউ ঘর থেকে বেরোয় না। জমা জল দ্রুত তোলার ব্যবস্থা হলে এর থেকে ভাল কিছু তো হতেই পারে না।’’ একই বক্তব্য তারাপুকুরের বাসিন্দা দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়ের।

আপাতত প্রকল্প কবে বাস্তবায়িত হয়, সে দিকেই তাকিয়ে এলাকাবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন