অবসরপ্রাপ্ত বিমা কর্মী শম্ভুনাথ চন্দ্র।
আশি বছর বয়স হল। এটিএম কার্ড, মোবাইল ব্যাঙ্কিং— এ সবে তেমন সড়গড় নই। এখনও আমার ভরসা এলাকার ডাকঘর। সেখানেই জমা রাখা আছে টাকা।
ছেলেরা সব কর্মসূত্রে বাইরে থাকে। আমি আর স্ত্রী থাকি চন্দননগরের পুরশ্রী এলাকার বাড়িতে। পেনশনের টাকায় সংসার চলে। এই বয়সে হাজার রকমের ওষুধ খেতে হয় আমাদের দু’জনকে। চিকিৎসকের খরচও কম নয়। প্রতি মাসে দু’তিন বার ডাকঘরে আসি নানা কাজে। একটা রিকশা ঠিক করা আছে। তাতেই যাতায়াত করি মাঝে মধ্যে। এ মাসে ভীষণ গোলমাল।
সোমবার বৃষ্টি-বাদলা মাথায় করে অসুস্থ শরীরে এসেছিলাম বড়বাজার এলাকার ডাকঘরে। এসে দেখি দরজা বন্ধ। ঝুলছে নোটিস বোর্ড। গত শুক্রবার অর্থাৎ, ৬ জুলাই থেকে নাকি বন্ধ রয়েছে ডাকঘর। অথচ, আমি তো এমন কিছুই জানতাম না। শুধু আমি কেন, আরও দু’একজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এমনকি অল্পবয়সী ছেলেও এসে ফিরে গিয়েছে। ডাকঘর বন্ধ রাখার কথা আমাদের আগে জানানো হয়নি। কতদিন ডাকঘর বন্ধ থাকবে তাও তো জানানো নেই নোটিসে। আমরা কবে টাকা পাব? এত দিন সংসার চলবে কী ভাবে? ওষুধ কিনব কী ভাবে? কিছুই জানি না।
কত কী নিয়ম কানুন চালু হচ্ছে প্রতিদিন। সুদের হার কমে যাচ্ছে। জীবন চালানোই দুষ্কর। তার মধ্যে আবার ডাককর্মীদের দুর্ব্যবহার। বয়সের কারণে কোনও কাজ করতেই দেরি হয়, অনেক সময় হাত কাঁপে, সই মেলে না— সব কিছু নিয়েই বিরক্ত কর্মীরা। অনেকেই মুখের উপর বলে বসেন, ‘‘এখানে আসেন কেন? এটিএম কার্ড করে নিন।’’ কার্ড করে নিলেও ব্যবহার করতে অসুবিধা হবে, জানি। এটিএম-এ যে দ্রুততায় টাকা তুলতে হয়, এই বয়সে এসে আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। চোখেও ভাল দেখি না। তার উপর রয়েছে প্রতারণার ভয়।
আমাদের তবে কী হবে? সারা জীবন নিজের উপার্জনে মাথা উঁচু করে বেঁচেছি। এখনও তাই চাই। কিন্তু এ দেশে কি তাও সম্ভব নয়!