কখন ফিরবেন ‘সেভজিৎ’, প্রহর গুনছেন হিন্দমোটরের মানুষ

‘ডাইভ’ দিয়ে মাটিতে পড়ার মুহূর্তে চকিতে চালিয়ে দেওয়া বাঁ পায়ে লেগে বলটা উড়ে যেতেই গোটা মাঠ জুড়ে গর্জন! রবিবারই অ্যাটলেটিকো দে কলকাতার গোলরক্ষক দেবজিৎ ওরফে ‘সেভজিৎ’ (মোহনবাগান সমর্থকেরা তাঁকে এই নামেই ডাকেন।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৩
Share:

ফাইনালের সেই মুহূর্ত।—নিজস্ব চিত্র।

‘ডাইভ’ দিয়ে মাটিতে পড়ার মুহূর্তে চকিতে চালিয়ে দেওয়া বাঁ পায়ে লেগে বলটা উড়ে যেতেই গোটা মাঠ জুড়ে গর্জন!

Advertisement

রবিবারই অ্যাটলেটিকো দে কলকাতার গোলরক্ষক দেবজিৎ ওরফে ‘সেভজিৎ’ (মোহনবাগান সমর্থকেরা তাঁকে এই নামেই ডাকেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও আসছে এই নাম) মজুমদারের দক্ষতা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে যায় তাঁর নিজের শহর হুগলির হিন্দমোটরে। সকলেই অপেক্ষায়, কখন বাড়ি ফিরবে‌ন ‘সেভজিৎ’!

হিন্দমোটরের বিধান পার্কে দেবজিতের বাড়ি। মা-ছেলের সংসার। মা অর্চনাদেবী বলেন, ‘‘টিভিতে খেলা দেখেছি। জানতাম ছেলেরা জিতবে। তবে টেনশন ছিল। ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়াতে টেনশন বেড়ে গিয়েছিল।’’ খেলা শেষ হওয়ার পর পড়শিরা বাড়িতে এসে অভিনন্দন জানিয়ে গিয়েছেন অর্চনাদেবীকে। প্রচুর ফোনও এসেছে। অর্চনাদেবী জানান, ছেলের স্বপ্ন দেশের হয়ে খেলার। তিনিও সেই দিনটার অপেক্ষায় রয়েছেন।

Advertisement

ভদ্রাকালী উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় ছেলে দেবজিৎকে হাত ধরে উত্তরপাড়া নেতাজি ব্রিগেড-এর কোচিং ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিলেন বাবা কেশবকুমার মজুমদার। সেই শুরু। ভয়ডরহীন ছেলেটাকে গোড়া থেকেই ভাল লেগে গিয়েছিল ক্লাবকর্তাদের। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে বাবা মারা যান। খেলার জন্য একাদশ শ্রেণির বেশি পড়া এগোয়নি দেবজিতের। এক সময়ে উত্তরপাড়ার রাজবাড়ি মাঠে নিবিড় অনুশীলনে ডুবে থেকেছেন তিনি। গত তিন বছর ধরে মোহনবাগানের ছেলে দেবজিৎ। তার আগের দু’বছর ছিলেন ভবানীপুরে। তার আগের বছর ইস্টবেঙ্গলে।

দেবজিতের সাফল্যের অন্যতম কারিগর নেতাজি ব্রিগেডের কর্মকর্তা সঞ্জয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘দেবজিৎ প্রচণ্ড সিরিয়াস। সে জন্যই এই জায়গায় পৌঁছেছে।’’ নেতাজি ব্রিগেডের ক্যাম্পে কোচ হিসেবে দেবজিৎ প্রথমে পেয়েছিলেন দেবাশিস মুখোপাধ্যায়কে। তার পর থেকে অনুপ নাগের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। দেবজিতের সাফল্যে সকলেই উচ্ছ্বসিত। অর্চনাদেবী বলেন, ‘‘সঞ্জয়বাবু যে কী সাহায্য করেছেন, বলে বোঝাতে পারব না। আমাদে্র সব সময় সাহস জুগিয়েছেন।’’

হুগলির বাসিন্দা, ময়দানের প্রাক্তন গোলকিপার তনুময় বসু বলেন, ‘‘গত তিন বছর ধরেই দেবজিৎ ভীষণ ধারাবাহিক। এই প্রতিযোগিতাতেও প্রতিটা ম্যাচেই ও ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলেছে।’’ টাইব্রেকারে গোল বাঁচানো নিয়ে তন‌ুময়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই ধরনের ম্যাচে টাইব্রেকার বাঁচানো ভীষণ কৃতিত্বের ব্যাপার। শেষ মূহূর্তের রিফ্লেক্সে দেবজিৎ পা টা চালিয়ে দিয়েছিল। তাতেই বাজিমাত।’’

দেবজিতের পাশাপাশি এটিকে-র জয়ের অন্যতম কারিগর প্রীতম কোটালও উত্তরপাড়ার বাসিন্দা। প্রীতম থাকেন উত্তরপাড়ার মাখ‌লায়। অপেক্ষার পালা চলছে তাঁর জন্যও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন