বেহাল: এই শৌচাগার কি ব্যবহার করা যায়, প্রশ্ন গ্রামবাসীর। নিজস্ব চিত্র
টিভি খুললেই ‘দরজা বন্ধ, দরজা বন্ধ’ করে হুমকি দেয় রাশভারী এক গলা। মুক্তশৌচের বিরুদ্ধে গত প্রায় কয়েক বছর ধরে প্রচার চালিয়ে আসছেন অমিতাভ বচ্চন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে— দরজাটা বন্ধ হবে কী করে?
কোনওটির দরজা আছে, ছাদ নেই। কোনওটিতে ছাদ বা দরজা কিছুই নেই। আলোর বালাই নেই। পান্ডুয়ার বোসপাড়া গ্রামে ডিভিসি খালের ধারে বেশ কয়েকটি ‘কমিউনিটি’ শৌচাগারের এমনই হাল। সেগুলি ব্যবহার করতে না পেরে খোলা জায়গাতেই শৌচকর্ম সারেন গ্রামবাসীরা। অথচ খাতায় কলমে হুগলি ‘নির্মল জেলা’।
প্রশাসন সূত্রের খবর, গ্রামে সাতশো মানুষের বাস। গত বছর পঞ্চায়েতের তরফে তিরিশটি শৌচাগার তৈরি হয়েছিল। তারমধ্যে ১০টিই বেহাল। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, শৌচাগারগুলি এত ছোট যে, ভিতরে ঢুকে ঠিক ভাবে বসা কঠিন। কোনও শৌচাগারে আবার মল উপছে পড়ছে। শৌচাগারের বাইরে জঞ্জাল আর আগাছায় ভর্তি। আশেপাশে মলে ভর্তি।
রজনী হেমব্রম নামে এক মহিলার অভিযোগ, সঠিক ভাবে কাজ না করাতেই সমস্যা। নির্মাণের সময়েই কয়েকটি শৌচালয়ের দরজা বসানো হয়নি। সব ক’টির ছাদে ঢালাই বা টিন বসানো হয়নি। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘‘কোনও মানুষের পক্ষে এগুলো ব্যবহার করা সম্ভব?’’ অন্য এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘বাধ্য হয়ে আমাদের ডিভিসির পাড়েই যেতে হয়। বিডিও দফতর বা পঞ্চায়েত খোঁজ
নেয় না।’’
লক্ষ্মী হেমব্রম নামে এক মহিলার খেদ, ‘‘আমাদের যেন লজ্জা থাকতে নেই! মাঠঘাটই ভরসা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘শীত হোক বা বৃষ্টিবাদলের দিন, ভোর থাকতে ঘুম থেকে উঠে কাজ সারতে হয়। নয় তো অপেক্ষা করতে হয়, কখন সন্ধ্যা নামবে। খুব সমস্যায় পড়লে মেয়ে-বউদের কী অবস্থা হয় ভাবুন।’’ গ্রামের প্রবেশ পথেই ওই বেহাল শৌচালয়। দুর্গন্ধে টেঁকা দায়। নাকে রুমাল দিয়ে চলতে হয়। এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘ছোটরা এই পথে স্কুলে যায়। ওদের তো রোগ ছড়াতে পারে। প্রশাসন একটু নজর দিক।’’
পঞ্চায়েতের স্থানীয় তৃণমূল সদস্য আনসুরা বিবি বলেন, ‘‘গত বছরে ৩০টি শৌচালয় করা হয়েছিল। রাস্তার ধারে ১০টি ভেঙে গিয়েছে। তাই কিছু মানুষ মাঠে যাচ্ছেন বলে শুনেছি। পঞ্চায়েত অনুমতি দিলে সেগুলি সংস্কারের ব্যবস্থা করব।’’ বিডিও (পান্ডুয়া) সমীরণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বেহাল শৌচালয়ের কোনও অভিযোগ পাইনি। শৌচালয় যদি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়তকে দ্রুত তা সংস্কার করতে বলা হবে।’’