বিখ্যাত ‘কালিকা কীর্তন’ নাচ।—নিজস্ব চিত্র।
পিছু হটছে কৃষ্ণযাত্রা ও কালিকাপাতড়ি।
নগরায়ণের পথে পা বাড়ানো গ্রামীণ শ্যামপুরে উঠে আসছে সাহিত্য, নাটক, গান-সহ সংস্কৃতি চর্চার আধুনিক মাধ্যমগুলি। আর এ সব এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দাবি উঠছে প্রেক্ষাগৃহের।
এক সময়ে শ্যামপুরের নিজস্ব লোকসংস্কৃতি ছিল কৃষ্ণযাত্রা এবং কালিকাপাতাড়ির নাচ। সে সবের চর্চা এখন আর হয় না বললেই চলে। এখানে যাঁর হাত ধরে আধুনিক সংস্কৃতি যাত্রা শুরু করেছিল তিনি, পূর্ণেন্দু পত্রী ছিলেন নাকোল গ্রামের মানুষ। ওই গ্রামেই কেটেছে তাঁর ছেলেবেলা এবং যৌবনের অনেকটা সময়। পরে কলকাতার বাসিন্দা হয়ে গেলেও তাঁর পরিচালিত একাধিক ছবির শুটিংয়ের জন্য বেছে নিয়েছিলেন নাকোলকেই। ‘স্ত্রীর পত্র’ ছবির শুটিং সূত্রে অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়ের এই গ্রামে থেকে যাওয়ার ঘটনা অনেকের স্মৃতিতে এখনও উজ্বল।
তার পরেও সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় পিছিয়ে নেই শ্যামপুর। কেউ লিখছেন কবিতা, কেউ ছোট গল্প। এ রকমই একজন আটপৌরে সাহিত্য-সাধক ষাট ছুঁই ছুঁই অসিত সাউ। নিজেকে সমাজসেবী হিসাবে দাবি করেন ফরওয়ার্ড ব্লকের একনিষ্ঠ এই কর্মী। তিনি গল্প লেখেন। নিয়মিত প্রকাশ করেন ‘শ্যামপুর সংস্কৃতি’ নামে ত্রৈমাসিক পত্রিকা। অসিতবাবু বললেন, ‘‘শ্যামপুরের একটা ইতিহাস আছে। সংস্কৃতি আছে। সেগুলি মানুষকে জানানো দরকার। সাহিত্য চর্চা ছাড়া আর কী ভাবে তা করা সম্ভব! সেই কাজ করতে গিয়ে আমি কোনও দল দেখি না।’’
অসিতবাবুর মতো মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু সাহিত্য কেন? নাটক এবং সঙ্গীত চর্চাও বাড়ছে শ্যামপুরে। পিছিয়ে পড়ছে কৃষ্ণযাত্রা এবং কালিকাপাতাড়ির নাচ। এখন সারা শ্যামপুরে রয়েছে একটি মাত্র কৃষ্ণযাত্রা এবং দু’টি কালিকাপাতাড়ির নাচের দল। সব মিলিয়ে জনা ৭০ মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত। এক সময়ে নিজের গুণে যাঁরা গ্রাম মাতাতেন, এখন অস্তিত্ব বজায় রাখতে তাঁদের নির্ভর করতে হচ্ছে সরকারি সহায়তার উপরে। উলুবেড়িয়া মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক অনন্যা মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা কন্যাশ্রী-সহ অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের প্রচারে এই সব লোকশিল্পীদের অনুষ্ঠান করার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। এ ছাড়া বিভিন্ন মেলাতেও তাঁদের পাঠানো হয়।’’
অন্যদিকে সরকারি সহায়তা দাবি করছেন আধুনিক সংস্কৃতি জগতের লোকজনও। অসিতবাবু এবং ‘ভোরের আলো’ পত্রিকার সম্পাদক সত্যব্রত দাস বললেন, ‘‘অডিটোরিয়ামের অভাবে আমরা সাহিত্যসভা করতে পারি না। নাটক বা সঙ্গীতের আসর বসাতে পারি না। একটি অডিটোরিয়াম খুব দরকার।’’ এ বিষয়ে তাঁরা চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানালেন শ্যামপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রঞ্জিৎ বেরা।
(শেষ)