রক্ত দিতেই হাতে চলে এল গাছের চারা

অবাকই হয়েছিলেন এক রক্তদাতা। কেননা, বেশ কিছু শিবিরে রক্তদান করেছেন তিনি। কিন্তু বর্তমান শাসকদলের ছোঁয়াচ থাকা রক্তদান শিবিরে ঘড়ি, প্রেশার কুকার, ওয়াটার ফিল্টারের পরিবর্তে গাছের চারা হাতে পেয়ে বিস্ময় চেপে রাখতে পারেননি যুবকটি।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ১২:৫৮
Share:

উপহার: রক্তদাতাদের গাছের চারা বিলি। নিজস্ব চিত্র

রক্ত দিলেই শাল, মেহগনি বা পেয়ারা গাছের চারা!

Advertisement

অবাকই হয়েছিলেন এক রক্তদাতা। কেননা, বেশ কিছু শিবিরে রক্তদান করেছেন তিনি। কিন্তু বর্তমান শাসকদলের ছোঁয়াচ থাকা রক্তদান শিবিরে ঘড়ি, প্রেশার কুকার, ওয়াটার ফিল্টারের পরিবর্তে গাছের চারা হাতে পেয়ে বিস্ময় চেপে রাখতে পারেননি যুবকটি।

রবিবার শ্রীরামপুর পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির উদ্যোগে ওই রক্তদান শিবির হয়। ৭০ জন স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। তাঁদের জন্য ছিল ফলের একটি প্যাকেট। এবং সঙ্গে গাছের চারা। অনেককেই বলতে শোনা গে‌ল, শহর জুড়ে যখন গাছ কাটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন এই উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্য।

Advertisement

বস্তুত, রক্তদান শিবিরে, বিশেষত বর্তমান শাসকদলের নেতানেত্রীরা যদি তার আয়োজন করেন, সেখানে এলাহি আয়োজনই দস্তুর। রক্তদাতাদের শিবিরে টানতে কেউ দেন ঘড়ি, কেউ প্রেশার কুকার, কেউ ঘড়া বা ওয়াটার ফিল্টার। এ সব পাওয়ার লোভে রক্তদান শিবির পরিণত হয় প্রতিযোগিতা আর উৎসবে৷ গত বছরেই তারকেশ্বরে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ তৃণমূলের উপ-পুরপ্রধানের উদ্যোগে আয়োজিত শিবিরে রক্তদান করেছিলেন। রক্তদাতাদের দেওয়া হয়েছিল ৫ লিটারের প্রেশার কুকার এবং ফলের প্যাকেট। সঙ্গে মাংস-ভাত। এই এলাহি আয়োজন নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছিল। কয়েক মাস আগে শ্রীরামপুর স্টেশন সংলগ্ন গাঁধী ময়দানে এক তৃণমূল নেতার উদ্যোগে আয়োজিত শিবিরেও রক্তদাতাদের ব্যাগ উপহার দেওয়া হয়। এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে।

এ ভাবে উপহারের লোভ দেখিয়ে শিবিরে রক্তদাতাদের নিয়ে আসার প্রবণতাতে রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত লোকজন প্রমাদ গোনেন। তাঁদের মতে, উপহারের লোভে অনেকে রক্ত দেন। একে স্বেচ্ছায় রক্তদান নয়। এটা রক্ত বিক্রির সমতুল। উপহারের লোভে কেউ জটিল রোগ লুকিয়ে রক্ত দিতে পারেন, এমন আশঙ্কাও থাকে। শুধু তাই নয়, পুরস্কার দেওয়ার রেষারেষিতে পিছিয়ে গিয়ে অনেক রক্তদান শিবির বন্ধও হয়ে গিয়েছে। এ দিনের রক্তদান শিবিরের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অসীম পণ্ডিত ওরফে ভূত। তাঁর কথায়, ‘‘উপহার দেওয়ার ভাবনা আমরা প্রথমেই মন থেকে ঝেড়ে ফেলি। ভয় ছিল, বিনা উপহারের শিবির কতটা সফল হবে! কিন্তু মানুষের আগ্রহ দেখে দুশ্চিন্তা চলে গিয়েছে।’’

এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন রাজ্যের ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স’-এর সম্পাদক অমিত দাস। তাঁর কথায়, ‘‘উদ্যোক্তারা একটা ভাল কাজ করতে গিয়ে আর একটা ভাল কাজ করে ফেললেন। রক্ত সংগ্রহের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সমাজসেবাও হল।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, কোনও কিছুতে প্রলুব্ধ হয়ে কেউ রক্ত দিলে তা নিরাপদ নাও হতে পারে না। লোভের হাতছানি থাকলে চিকিৎসকের প্রশ্ন এড়িয়ে বা মিথ্যা বলতে পারেন দাতা। গাছ বড় হলে পরিবেশের পক্ষে সহায়ক হবে। গত ৪ জুন‌ কলকাতায় একটি রক্তদান শিবিরেও রক্তদাতাদের গাছের চারা দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান। শুক্রবার মেদিনীপুরের একটি ক্লাবও রক্তদাতাদের হাতে তুলে দিয়েছিল সবুজ চারা। অমিতবাবুরা চাইছেন, এই প্রবণতাই বাড়তে থাকুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন