নেতা-নিরাপত্তায় বাড়তি জোর 

বৃহস্পতিবার হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের তরফে সিঙ্গুর পুলিশ লাইনে বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি-নেতা ও তাঁদের নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। পুলিশের তরফে জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ করা হয়, নিরাপত্তারক্ষীদের তাঁরা যেন সব সময় সঙ্গে রাখেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৬
Share:

আর ঢিলেঢালা মনোভাব নয়। নদিয়ায় বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে হুগলিতে জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে সতর্ক হতে চাইছেন পুলিশকর্তারা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের তরফে সিঙ্গুর পুলিশ লাইনে বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি-নেতা ও তাঁদের নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। পুলিশের তরফে জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ করা হয়, নিরাপত্তারক্ষীদের তাঁরা যেন সব সময় সঙ্গে রাখেন। কারও ক্ষেত্রে বাড়তি নিরাপত্তার দরকার হলে, তা যেন পুলিশকর্তাদের জানানো হয়। নিরাপত্তারক্ষীদের বলা হয়, তাঁরা যেন সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি বা নেতার উপরে সবসময় সজাগ দৃষ্টি রাখেন। ছুটি নিলে যেন স্থানীয় থানায় অবশ্যই জানান। যাতে তাঁর পরিবর্তে অন্য কর্মী মোতায়েন করা যায়।

জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তার প্রশ্নে সবই করা হচ্ছে।’’ চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অখিলেশ ত্রিপাঠী আগেই জানিয়েছিলেন, কমিশনারেট এলাকায় যে সব নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন, তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে— কোনও ভাবেই কাউকে একা ছাড়া যাবে না। সব সময় সঙ্গে থাকতে হবে।

Advertisement

পুলিশের এই উদ্যোগে জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যাঁর যেমন সুরক্ষা দরকার, প্রশাসন তা দিচ্ছে।’’ উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল বলেন, ‘‘দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে ঠিকই। নিরাপত্তারক্ষীকে সবসময় সচেতন থাকতে হবে। জনপ্রতিনিধিদেরও তাঁদের যথাযথ ভাবে ব্যবহার করতে হবে।’’

নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ যে দিন যখন খুন হন, সে দিন তাঁর নিরাপত্তারক্ষী ছুটি নিয়েছিলেন। তার পরেই নবান্ন থেকে পুলিশের কাছে নির্দেশ আসে— সতর্ক থাকতে হবে। পুলিশের তৎপরতা বাড়ে হুগলিতে। পুলিশ সূত্রের খবর, এই জেলায় প্রায় চল্লিশ জন জনপ্রতিনিধি এবং নেতা সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী পান। অধিকাংশেরই নিরাপত্তারক্ষী এক জন। জেলা পুলিশের ক্ষেত্রে ডিআইবি (ডিস্ট্রিক্ট ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ) এবং কমিশনারেটের ক্ষেত্রে এসবি (স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ)-র রিপোর্টের ভিত্তিতেই নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা স্থির হয়।

কিন্তু নেতা-নিরাপত্তায় এই বাড়তি সতর্কতা কতদিন মানা যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই নানা কারণে জনপ্রতিনিধিরা নিরাপত্তারক্ষীকে সঙ্গে নিয়ে বেরোন না। বরং তাঁদের দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে নেন। কয়েক বছর আগে ভদ্রেশ্বরে শাসকদলের এক নেতার বিরুদ্ধে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীকে দিয়ে বাড়ি তৈরির কাজে ইটের পাঁজায় জল দেওয়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনে হইচইও হয়। বর্তমানে এক নেতার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কনস্টেবল মেনে নেন, ‘‘স্যার যা বলেন, তাই করি। ছুটির দরকার হলে স্যারকে বলেই নিই।’’ আর এক নিরাপত্তারক্ষী বলেন, ‘‘সাহেব গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলে মেমসাহেবকে মোটরবাইকে বসিয়ে বিউটি পার্লারেও নিয়ে যেতে হয়।’’

সত্যজিৎ খুনের পরে প্রশাসনের টনক নড়েছে ঠিকই, কিন্তু এ জেলাতেও নেতাদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা কম নেই। ২০১৩ সালে রিষড়ার কাউন্সিলর (এখন পুরপ্রধান) বিজয় মিশ্র রেল স্টেশনে গুলিবিদ্ধ হন। তদন্তে জানা যায়, ওই দিন ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীকে সঙ্গে নেননি তিনি। দু’বছর আগে চণ্ডীতলার ভগবতীপুরে দলীয় কার্যালয়ে গুলিবিদ্ধ হন জেলা পরিষদের তৎকালীন মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ, তৃণমূল নেতা আসফার হোসেন। বছর তিনেক আগে শ্রীরামপুরে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় জখম হন তৃণমূলের পুর-পারিষদ উত্তম রায়। ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর রাতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন ভদ্রেশ্বরের তৎকালীন পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায়। আসফার, উত্তম, মনোজের অবশ্য নিরাপত্তারক্ষী ছিল না। পুলিশ সূত্রের খবর, মনোজ নিজেই নিরাপত্তারক্ষী নিতে চাননি।

এখন পুলিশ সতর্ক করলেও নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে জন‌প্রতিনিধিদের ঢিলেঢালা মনোভাব দূর হবে কিনা, সেটাই প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন