রাজমিস্ত্রি সেজে সশস্ত্র চার দুষ্কৃতী ধরল পুলিশ

বৃহস্পতিবার বিকেলে হুগলির নবগ্রামের শরৎ চ্যাটার্জি রোডে তখন যেন পুরোদস্তুর সিনেমার শ্যুটিং চলছে। তবে ‘চমকাতে’ আসা ছেলেগুলো ততক্ষণে বুঝে ফেলেছে, রাজমিস্ত্রির ভেক ধরে ফাঁদ পেতেছে আসলে পুলিশ। রাজমিস্ত্রি সেজে এ ভাবেই  সশস্ত্র চার দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল উত্তরপাড়া থানার পুলিশ।

Advertisement

প্রকাশ পাল

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:১১
Share:

নাটকীয়: গ্রেফতারের পর। নিজস্ব চিত্র

নির্মীয়মাণ আবাসনে হঠাৎ এসে পড়ল বোমা!

Advertisement

‘রাজমিস্ত্রি’দের তখন কেউ বালি-সিমেন্ট মাখছেন। কারও মাথায় ইট। আবার কেউ গামছা কাঁধে কাজের তদারকি করছেন। ভয়ে পালানো তো দূর, ওই ‘রাজমিস্ত্রি’রা যেন এমন মুহূর্তেরই অপেক্ষা করছিলেন!

বোমা ফাটার সঙ্গে সঙ্গেই ‘রাজমিস্ত্রি’রা জাপটে ধরেন যুবকটিকে। তার পরে ছুটে যান পাশের গলিতে। তাঁদের দেখে বাইক নিয়ে পালাতে গিয়েও পড়ে গেল অন্য আর এক যুবক। বাঁচার জন্য সে প্রথমে রিভলভার উঁচিয়ে গুলি করার চেষ্টা করল। পাথর ছুড়ে মারার চেষ্টা করল। কিন্তু ‘রাজমিস্ত্রি’দের দাপটের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারল না সে। এ ভাবেই একে একে আরও তিন জন ধরা পড়ল ওই ‘রাজমিস্ত্রি’দের হাতে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকেলে হুগলির নবগ্রামের শরৎ চ্যাটার্জি রোডে তখন যেন পুরোদস্তুর সিনেমার শ্যুটিং চলছে। তবে ‘চমকাতে’ আসা ছেলেগুলো ততক্ষণে বুঝে ফেলেছে, রাজমিস্ত্রির ভেক ধরে ফাঁদ পেতেছে আসলে পুলিশ। রাজমিস্ত্রি সেজে এ ভাবেই সশস্ত্র চার দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল উত্তরপাড়া থানার পুলিশ।

ধৃতদের ন‌াম বিক্রম দে, রিন্টু রায়, রবি রাই এবং শুভ্র গোলদার। তাদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। বিক্রম, রিন্টু, শুভ্রর বাড়ি কোন্নগরে। রবি শ্রীরামপুরের মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা। চন্দননগর কমিশনারেটের এডিসিপি (শ্রীরামপুর) অতুল ভি বলেন, ‘‘সকাল থেকেই পুলিশ ছদ্মবেশে ছিল। ধরা পড়ার সময় এক দুষ্কৃতী পুলিশের উপর গুলি চালানোর চেষ্টা করে। তবে পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, তোলা চেয়ে এক প্রোমোটারকে ফোনে হুমকি দিচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। টাকা না দিলে খুনের হুমকি দিচ্ছিল। সূত্র মারফত পুলিশ বিষয়টি জানতে পারে। দুষ্কৃতীরা হুমকি দেয়, টাকা না পেলে বৃহস্পতিবার আবাসনে এসে হামলা চালাবে। এর পরেই নির্মীয়মাণ ওই আবাসনের রাজমিস্ত্রিদের সরিয়ে এ দিন সাত সকাল থেকে উত্তরপাড়া থানার আইসি মধুসূদন মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশকর্মীরা রাজমিস্ত্রির ছদ্মবেশ নেন।

তদন্তকারীরা জানান, দুপুর আড়াইটে নাগাদ দুই যুবক ২-৩ বার ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। পুলিশ অফিসাররা বুঝে যান, দুষ্কৃতীরা ‘রেইকি’ করছে। বিকেল চারটে নাগাদ এক দুষ্কৃতী বোমা ছোড়ে। পাশের গলিতে দু’টি মোটরবাইকে চার জন দুষ্কৃতী অপেক্ষা করছিল। পুলিশ সেখানে গিয়ে প্রথমে দু’জনকে ধরে।

সেই সময় বেগতিক বুঝে এক জন মোটরবাইক নিয়ে পালাতে গিয়ে পড়ে যায়। বেপরোয়া হয়ে তখন সে পুলিশকে বন্দুক দেখায়। পাথর ছুড়ে মারার চেষ্টা করে। পুলিশকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে বন্দুক কেড়ে নিয়ে তাকেও গ্রেফতার করে। এ সবের মধ্যেই এক দুষ্কৃতী পালিয়ে যায়। পরে এডিসিপি অতুল ভি এবং এসিপি মল্লিকা গর্গ ঘটনাস্থলে তদন্তে আসেন। পুলিশের দাবি, ধৃতদের কাছ থেকে ১টি গুলিভর্তি নাইন এমএম এবং একটি ওয়ান শটার আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২টি তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে। বাইক দু’টি আটক করা হয়েছে।

কমিশনারেট সূত্রের খবর, ধৃতেরা নবগ্রামের দুষ্কৃতী কার্তিক দাস এবং ভাস্কর সাহা ওরফে অটো’র হয়ে তোলাবাজি করতে এসেছিল। পুলিশ জানায়, পুলিশ যে ওদের গতিবিধি টের পেয়ে গিয়েছে, দুষ্কৃতীরা তা বুঝতে পারেনি। কার্তিক এবং অটো জেলে। ফলে ঘুরে ফিরে উঠছে জেলে বসেই বাইরের জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করার সেই পুরনো গল্পই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন