গোপীনাথের পিছনে কে? খুঁজছে পুলিশ

কী করে সে এলাকার ‘ত্রাস’ হয়ে উঠেছিল, তার পিছনে কে রয়েছে— সে সবের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।

Advertisement

নুরুল আবসার  ও সুব্রত জানা

ডোমজুড় শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৯ ০০:০২
Share:

জখম কারখানার মািলকের দেহরক্ষী সুশান্ত বারিক। নিজস্ব চিত্র

সকলেই তার নামে কাঁপেন। এতদিন কেউ তার বিরুদ্ধে থানায় যেতে সাহস করেননি। তোলা না-পাওয়ায় সলপের একটি জল কারখানার মালিক ও তাঁর দেহরক্ষীকে মারধরের অভিযোগে শনিবারই প্রথমবার গ্রেফতার হল তেঁতুলকুলি গ্রামের বছর ত্রিশের গোপীনাথ পাত্র। আর সে গ্রেফতার হতেই আরও কিছু কারখানা-মালিকও গোপীনাথের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন।

Advertisement

কী করে সে এলাকার ‘ত্রাস’ হয়ে উঠেছিল, তার পিছনে কে রয়েছে— সে সবের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সৌম্য রায় জানিয়েছেন, তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হবে। তোলাবাজি কোনওমতে বরদাস্ত করা হবে না।

ডোমজুড় থানা এলাকায় মুম্বই রোডের দু’ধারে অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে। সেই সব কারখানার জমি কিনতে গোপীনাথকে তোলা দিতে হয়েছে বলে মালিকদের একাংশের অভিযোগ। রুক্ষ মেজাজের গোপীনাথ তোলা না-পেলেই কারখানা মালিকদের সঙ্গে অভব্য আচরণ এবং মারধরও করত বলে অভিযোগ। তা ছাড়াও, বিভিন্ন পুজো এবং অনুষ্ঠানে মোটা টাকা চাঁদা আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে গোপীনাথের বিরুদ্ধে।

Advertisement

গোপীনাথ সলপেই একটি পাথরের দোকানে চাকরি করত। বেতন পেত ১০ হাজার টাকার মতো। অবশ্য পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরে তার সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন পাথরের দোকান কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, চাকরিটি ছিল গোপীনাথের দেখনদারি। তার আসল কাজ ছিল তোলাবাজি। সে কারণেই সকলে তাকে ভয় পেত। অনেকে দাবি করেন, গোপীনাথ সলপ-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা গোপাল ঘোষের অনুগামী। তাঁর নাম ব্যবহার করে গোপীনাথ দুষ্কর্ম করে বেড়াত। ‘গোপালবাবুর লোক’ মনে করে গোপীনাথকে কেউ ঘাঁটাত না। তা ছাড়াও, গোপীনাথের পিছনে এলাকার এক জমি-মাফিয়াও রয়েছে। একই দাবি করে কয়েকজন কারখানা-মালিক জানান, ওই জমি-মাফিয়ার নির্দেশেই গোপীনাথ ও তার দলবল তোলাবাজি চালাত। না-পেলে জমি গ্রাস করার চেষ্টা করত। ওই জমি-মাফিয়ার কথা তুলেছেন মানসবাবুও।

তাণ্ডব: ঝামেলা হয়েছিল এই কারখানাতেই। নিজস্ব চিত্র

গোপীনাথকে অনুগামী বলে মানতে চাননি তৃণমূল নেতা গোপালবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘ পাড়ার ছেলে হিসেবে ওকে চিনি। বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল না। এক সময়ে সিপিএম করত। এখন কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত নয় বলেই জানি।’’ গোপীনাথের সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

এ হেন গোপীনাথের বিরুদ্ধে কেউ থানায় না-গেলেও আক্রান্ত হওয়ার পরে শুক্রবার রাতে জল-কারখানার মালিক মানস রায় এবং তাঁর দেহরক্ষী পুলিশের কাছে যেতে দ্বিধা করেননি। পুলিশ জানিয়েছে, মানসবাবু অভিযোগ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে গোপীনাথের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মানসবাবুও বলেন, ‘‘আমার জমিও বেআইনি ভাবে গ্রাস করার মতলবে রয়েছে ওই জমি-মাফিয়া। তার নির্দেশেই ঝামেলা করছে গোপীনাথ। পুলিশকে সব জানিয়েছি। গোপালবাবু কারখানা গড়ার ক্ষেত্রে আমাকে সহায়তাই করেছেন।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন