পাত্রের বয়স ১৭, বিয়ে রুখল প্রশাসন

পড়শিদের মারফত খবর পেয়ে হুগলির চণ্ডীত‌লা-১ ব্লকের শিয়াখালায় ওই কিশোরের বাড়ি হাজির হন প্রশাসনের আধিকারিকরা। পাত্র তখন সবে বিয়ে করতে বেরোচ্ছে। পুলিশ দেখেই ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করে সে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০০:৩৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

অষ্টাদশীর বিয়ে বছর সতেরোর নাবালকের সঙ্গে!

Advertisement

পড়শিদের মারফত খবর পেয়ে হুগলির চণ্ডীত‌লা-১ ব্লকের শিয়াখালায় ওই কিশোরের বাড়ি হাজির হন প্রশাসনের আধিকারিকরা। পাত্র তখন সবে বিয়ে করতে বেরোচ্ছে। পুলিশ দেখেই ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করে সে। প্রশাসনিক আধিকারিকরা বোঝান, ভয়ের কারণ নেই। সাবালক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে না করলেই তার দোষ মাফ। কাঁদতে কাঁদতে কিশোর জানায়, সে বিয়ে করবে না।

মেয়েদের ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছরের আগে বিয়ের বিধি-নিষেধের বিষয়টি নিয়ে অনেকের মধ্যেই যে এখনও সচেতনতার অভাব রয়েছে, এই ঘটনা তার প্রমাণ। তা ছাড়া, ছেলেটি নিজে এক জন শিশুশ্রমিক। সেটাও আইনবিরুদ্ধ। বিডিও (চণ্ডীতলা-১) এষা ঘোষ বলেন, ‘‘এই ব্লকে স্কুলছুট হয়ে ছেলেদের ভিন্‌রাজ্যে কাজে যাওয়া এবং মেয়ে বা ছেলেদের কম বয়সে বিয়ের প্রবণতা রয়েছে। এই ধরনের সামাজিক ব্যাধি দূর করতে প্রশাসনের তরফে মানুষকে সচেতন করার কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে।’’

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, শিয়াখালার রঘুনাথপুরে ওই কিশোর ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোমা করেছে। তারপরই পড়ার পাঠ চুকিয়ে সে বেঙ্গালুরুতে সোনা-রুপোর কাজে যোগ দেয়। মাস খানেক আগে সে ফিরেছে শিয়াখালায়। তার সঙ্গে পাশের হরিপাল ব্লকের ইলিপুরের এক অষ্টাদশীর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়। ঘটা করেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। আত্মীয় স্বজনরা এসে গিয়েছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে গ্রাম পর্যায় শিশু সুরক্ষা কমিটির প্রতিনিধিরা ছেলেটির অভিভাবকদের বোঝান, একুশ বছরের আগে ছেলের বিয়ে দেওয়া বেআইনি। সেই কথা পরিবারটি কানে তোলেনি।

খবর পেয়ে চণ্ডীতলা-১ বিডিও দফতরের এক আধিকারিক পুলিশ নিয়ে ছেলেটির বাড়িতে যান। তাকে এবং বাড়ির লোকজনকে বিডিও অফিসে ডাকা হয়। চাইল্ড লাইনের তরফে হরিপালের বিডিও-কে বিষয়টি জানানো হয়। ওই দফতরের আধিকারিক মেয়েটির বাড়িতে যান। দেখা যায়, তার বয়স আঠেরো বছর। বাবা-মা মারা গিয়েছেন। প্রশাসনিক আধিকারিকদের হস্তক্ষেপে ওই বিয়ে বন্ধ হয়। ওই কিশোরের কথায়, ‘‘জানতাম, পাত্রী ১৪ বছরের। এখন বুঝছি, সেখানেও ভুল হয়ে যাচ্ছিল।’’

গত কয়েক দিনে হুগলির নানা জায়গায় আরও অন্তত ৫ জন নাবালিকার বিয়ে বন্ধ হয়েছে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে। প্রায় সবক’টি ক্ষেত্রেই সূত্র মারফত চাইল্ড লাইনে বিয়ের খবর পৌঁছয়। হরিপালের চন্দনপুরের চোদ্দ বছরের এক কিশোরীকে (ষষ্ঠ শ্রেণিতে স্কুলছুট) পোলবায় নিয়ে গিয়ে বাড়ির লোকজন লুকিয়ে বিয়ে দিচ্ছিলেন। প্রশাসন তৎপর হয়ে বিয়ে আটকায়। একই ভাবে বলাগড়ের ধোবাপাড়‌া গ্রাম, আরামবাগ পুর-এলাকার বাতানলের চকহাজি, পান্ডুয়ার রোশনা এবং গোজিনা দাসপুরে চার নাবালিকার বিয়ে আটকায় প্রশাসনের তৎপরতায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন