বিষ্ণু খুনে বিশাল-সহ দোষীদের ফাঁসির দাবিতে মঙ্গলবার ঘড়ির মাড়ে মোমবাতি মিছিল। — নিজস্ব চিত্র।
ধরা পড়েছে বিশাল। শ্রীঘরে তার বেশির ভাগ শাগরেদ। কিন্তু বুধবার বিকেল পর্যন্ত চুঁচুড়ার রায়বেড়ের নিহত বিষ্ণু মালের কাটা মুণ্ড উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, আদালতে আবেদন করে বিশালকে এখানে আনা হবে। তাকে জেরা করে মুণ্ডটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। যে তরুণীর সঙ্গে সর্ম্পকের জেরে বিষ্ণুকে খুন করা হয়েছে, তাঁর মাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা।
কমিশনারেট সূত্রের খবর, বিষ্ণু খুনে ধৃত বিশালের শাগরেদ মান্তু ঘোষ জেরায় জানিয়েছে, বিষ্ণুকে খুনের পরে ১১ অক্টোবর সকালে বিশাল সাইকেলে বিষ্ণুর কাটা মুণ্ড নিয়ে বৈদ্যবাটী চৌমাথায় আসে। সেখানে মান্তুকে অপেক্ষা করতে বলে দিল্লি রোড ধরে ভদ্রেশ্বরের দিকে যায়। আধ ঘণ্টার মধ্যে বৈদ্যবাটী চৌমাথায় ফিরে আসে। তখন সাইকেলে বিষ্ণুর মুণ্ডভরা ব্যাগ না-দেখে মান্তু জানতে চায়, বিশাল সেটি কোথায় ফেলেছে। বিশাল উত্তর দেয়নি। তার পরে গাড়ি ভাড়া করে দু’জনে দমদম বিমানবন্দরে যায়। বিমানের টিকিট কেটে মান্তুকে অন্য রাজ্যে পাঠিয়ে দেয় বিশাল। নিজে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পালায়।
পুলিশের দাবি, দুষ্কর্ম ঘটিয়ে আগেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং বা সংলগ্ন এলাকায় পালিয়েছিল বিশাল দাস। বিষ্ণুকে নৃশংস ভাবে খুন করেও চেনা জায়গাতেই গা-ঢাকা দিয়েছিল সে। পুলিশের নাগাল এড়াতে ক্রমাগত জায়গা বদল করছিল। কিন্তু জীবনতলায় গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ে যায়। ধরা পড়ার পরেও তার ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাব ফুটে ওঠে।
সোমবার রাতে বিশাল এবং তার শাগরেদরা গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। মঙ্গলবার সকালে গ্রামবাসীরা যখন তাকে ঘিরে ধরেছেন, তখনও বিশাল না ঘাবড়ে ঠান্ডা গলায় বলেছে, ইউটিউব দেখলেই বোঝা যাবে, সে কে! আগেও একাধিক ক্ষেত্রে বেপরোয়া ভাবে সে দুষ্কর্ম ঘটিয়েছে। চুঁচুড়া শহরে বিশালকে নিয়ে রীতিমতো চর্চা চলছে।
মনস্তত্ত্ব নিয়ে চর্চা করেন, এমন অনেকেরই বক্তব্য, কারও অপরাধ-মনস্কতার পিছনে কোনও প্রেক্ষাপট থাকে। ছোটবেলার বঞ্চনা তাকে এই পথে ঠেলে দিতে পারে। কখনও অতিরিক্ত প্রশ্রয় পেলেও এমন হতে পারে। দুই ক্ষেত্রেই অন্যের প্রতি সংবেদনশীলতা হারিয়ে যায়। অন্যের অনুভূতিকে বোঝার মানবিকতা কাজ করে না। তা ছাড়া, নিজের ‘দাদা’ বা ‘ডন’ ভাবমূর্তি তৈরি করতে গেলে নিজের মধ্যে সংবেদনশীলতার মাত্রা ক্ষেত্রবিশেষে শূন্যে নামিয়ে আনতে হয়। বিশালের মানসিক-গড়নও এমনই বলে তাঁরা মনে করেন।
জেলার এক প্রবীণ আইনজীবীর কথায়, ‘‘পরিবেশে তার কোনও অভিজ্ঞতা থেকে এমন মানসিকতা হতে পারে। মাথার উপরে প্রভাবশালীর হাত থাকলেও হয়।’’ পুলিশের একাংশের বক্তব্য, কেউ অন্য দুষ্কৃতীদের সঙ্গে মিশতে মিশতে সংশ্লিষ্ট দল বা রাজনৈতিক প্রভাবশালীর বরাভয় পেয়ে বাড়তে থাকে। কেউ নিজের কোমরের জোরে অন্ধকার জগতে নিজের প্রভাব খাটায়। বিশালও নিজেকে ‘একাই একশো’ বলে মনে করে।
এই জেলায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর আগে ব্যান্ডেলের এক দুষ্কৃতী তল্লাশিতে যাওয়া পুলিশ আধিকারিককে হুমকি দিয়েছিল, থানায় বোমা মেরে দেবে। বিশাল অনেকটা এই শ্রেণিভুক্ত। ব্যান্ডেলের ওই দুষ্কৃতী রেল বস্তিতে থাকত। বিশালও আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকার ছেলে। অন্যকে টক্কর দিয়ে লড়াইতে টিকে থাকতেই সে বেপরোয়া। এই ভাবটাই সমাজবিরোধী হিসেবে ওর ইউএসপি।’’