ভাঙা হচ্ছে চোলাই ঠেক। নিজস্ব চিত্র
নদিয়ায় বিষমদে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই টনক নড়েছে হুগলি জেলা প্রশাসনের। জেলা পুলিশ ও চন্দননগর কমিশনারেট বিভিন্ন এলাকায় হানা দিতে শুরু করেছে।
দু’একটি থানা এলাকা বাদ দিলে হুগলির বেশিরভাগ এলাকাতেই চলে চোলাইয়ের রমরমা কারবার। সর্বত্র মদ তৈরি না হলেও পাউচ প্যাকেটের মোড়কে তা সর্বত্রগামী। বিশেষত হাওড়া-ব্যান্ডেল শাখার প্রায় প্রতিটি রেল স্টেশনের গায়ে চটের তাঁবুর আড়ালে শুরু হয় ব্যবসা, সেই সকাল থেকে। যাত্রীদের অনেকের অভিযোগ, সব দেখেও নীবর পুলিশ। রাজনৈতিক যোগসাজসেই রমরমিয়ে চলে নেশা। এমনকি পুলিশ ও নেতাদের একাংশ ওই ব্যবসা থেকে মোটা টাকা তোলা নেন বলেও অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অবশ্য তৎপর হয়ে উঠেছে প্রশাসন। হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সিঙ্গুরের আজবনগর ও পলতাগড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১টি চোলাই ভাটি ভেঙেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই এলাকায় সাড়ে তিন কেজি চোলাই তৈরির গুড় নষ্ট করা হয়েছে। চোলাই মজুত করে রাখা ৯ টি মাটির হাঁড়ি ভাঙা হয়েছে। ১০৫ লিটার চোলাই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
অভিযান চলেছে পুরশুড়ার রাউতাড়াতেও। সেখানে আকবরি খালের দু’পাড় জুড়ে চোলাই ভাটির মধ্যে এ দিন অন্তত ২০টি পুলিশ ভেঙে দেয়। প্রায় দু’হাজার লিটার মদ নষ্ট করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। কিন্তু কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। এই অভিযানে সন্তুষ্ট নন স্থানীয় মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, আকবরি খালের দু’পাশে অন্তত ৪৫টি ভাটি চলে। যে ক’টি এ দিন ভাঙা হল, সেগুলিও কয়েক দিনের মধ্যে ফের গজিয়ে উঠবে বলে এক প্রকার নিশ্চিত তাঁরা। যদিও পুলিশের দাবি, গত বছর চারেক ধরে বিক্ষিপ্ত অভিযানেও অনেকখানি কমানো গিয়েছে রমরমা। এ দিন বিকেলে গোঘাটের মথুরাতেও চোলাই ভাটিতে হানা দেয় পুলিশ ও আবগারি দফতর। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে প্রায় ৬০০ লিটার চোলাই। চন্দননগর কমিশনারেট এলাকাতেও অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনার অজয় কুমার। তিনি বলেন, ‘‘চোলাই মদের সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করার সঙ্গেই প্রচুর মদ নষ্ট করেছে পুলিশ।’’
কিন্তু এই জোরদার অভিযান কতদিন চালানো হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। অনেক সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা, অভিযান কিছুটা শিথিল হলেই ফের ভাটি গজিয়ে ওঠে। ফের শুরু হয়ে যায় বেআইনি ব্যবসা। সাইকেলে, মোটরবাইকে জ্যারিকেন ভর্তি চোলাই ছড়িয়ে পড়ে নানা প্রান্তে। অনেক চেষ্টা করেও চণ্ডীতলা, বেগমপুর, কাপাসহাড়িয়া, জনাই, সিঙ্গুরে চোলাই ব্যবসা বন্ধ করা যায়নি। দিনের আলো নিভলেই তীব্র মদের গন্ধে ম-ম করে এলাকা। সকালে রেল ও সড়কপথে হাওড়া, কলকাতা, এমনকি বর্ধমান জেলার দূরবর্তী অংশে পৌঁছে যায় পাউচ।
পুলিশ ও আবগারি দফতরের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, পরিকাঠামোগত নানা অসুবিধা নিয়েই সারা বছর অভিযান চালায়। তবে সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে এই ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়।