রাধাবল্লভ ঘাটেও ভরসা সেই বাঁশের জেটি

ভুটভুটি ধরতে মাঝ গঙ্গায় হাঁটাই ভরসা

গত রবিবার বিকেলে মেয়ের জন্য পাত্র দেখতে শ্রীরামপুরের নেহরুনগর কলোনিতে আসছিলেন ঝাড়গ্রামের বিষ্ণুমোহন মল্লিক। ট্রেনে দমদম হয়ে টিটাগড়ে নেমে গঙ্গায় ভুটভুটি চেপে শ্রীরামপুরের রাধাবল্লভ ঘাটে পৌঁছতেই বিপত্তি!

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৪৩
Share:

বিপজ্জনক: এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের জেটি দিয়ে পারাপার রাধাবল্লভ ঘাটে। নিজস্ব চিত্র

গত রবিবার বিকেলে মেয়ের জন্য পাত্র দেখতে শ্রীরামপুরের নেহরুনগর কলোনিতে আসছিলেন ঝাড়গ্রামের বিষ্ণুমোহন মল্লিক। ট্রেনে দমদম হয়ে টিটাগড়ে নেমে গঙ্গায় ভুটভুটি চেপে শ্রীরামপুরের রাধাবল্লভ ঘাটে পৌঁছতেই বিপত্তি! নৌকো থেকে বাঁশের নড়বড়ে সেতুতে উঠতেই পা হড়কে পড়লেন বৃদ্ধ। তাতে ডান কাঁধের হাতে চিড়। পাত্র দেখা ফেলে ছুটতে হল হাসপাতালে।

Advertisement

উপরের ঘটনা একটা উদাহরণ মাত্র। হুগলির মহকুমা শহর শ্রীরামপুরের রাধাবল্লভ ঘাটে পারাপার করতে হলে দুরুদুরু বুকে এভাবেই যাতায়াত করতে হয়। অভিযোগ, এই ঘাটে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের বালাই নেই। শহরের যুগল আঢ্য ফেরিঘাটে ভাসমান জেটি রয়েছে। এই ঘাটে নেই। তার বদলে আছে প্রায় ছ’শো ফুট দীর্ঘ বাঁশের সেতু। সেতুর কোন জায়গায় ভুটভুটি দাঁড়াবে জলের বাড়াকমার উপরে তা নির্ভর করে। জল কম থাকলে সেতুর শেষ পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়।

এতদিন বিষয়টা নিয়ে অভিযোগ ছিলই। তবে বুধবার তেলেনিপাড়ার ঘটনার পর কেমন যেন ভয়টা আঁকড়ে বসেছে নিত্যযাত্রীদের মনে।

Advertisement

শোকস্তব্ধ: তখন জোর কদমে চলছে উদ্ধার কাজ, পরিজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্না। ছবি: তাপস ঘোষ ও দীপঙ্কর দে

যাত্রীদের অভিযোগ, জল বাড়লে সেতুর অনেকটা অংশ জলের তলায় থাকে। ফলে সেতু স্যাঁতস্যাতে হয়ে যায়। তার উপর আবার সেতুর দু’ধারে ধরার কোনও জায়গা নেই। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে। বুধবার বিকেলে রজত বিশ্বাস নামে মাহেশের এক যুবক টিটাগড় থেকে ভুটভুটি চেপে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘মাঝে মধ্যে এই ঘাট দিয়ে চলাফেরা করি। কখনও প্রায় আধ কিলোমিটার সেতু দিয়ে হাঁটতে হয়। আর চড়া পড়লে তো কথাই নেই!’’ ঘাটকর্মী রঞ্জিৎ দাস জানান, হুগলির সবচেয়ে চওড়া ঘাট এটাই। গড়ে আট-ন’শো লোক প্রতিদিন যাতায়াত করেন।

কী বলছেন পুর-কর্তৃপক্ষ?

পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় জানান, শহরের তিনটি ঘাটের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্যই রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। সরকার শুধু যুগল আঢ্য ফেরি ঘাটের ( ধোবি ঘাট) জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে। ওই কাজে ১০ লক্ষ টাকা মিলেছে। ওই টাকায় যাত্রী স্বাচ্ছ্বন্দ্য আরও বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে।

তা হলে রাধাবল্লভ ঘাটে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই যাত্রী পারাপার চলবে?

পুরপ্রধান বলেন, ‘‘কাউন্সিলররা ঘাট পরিদর্শন করেন। এটা আরও বাড়াতে হবে। ইজারাদারকে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে, চূড়ান্ত সতর্কতা নিয়ে পারাপার করতে। অন্যথায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে ঘাট চালানোর বিষয়টিও ভেবে দেখা হবে।’’ পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, তেলেনিপাড়ার ঘটনার পরেই ইজারদারকে ডেকে পাঠিয়ে এ ব্যাপারে ফের সতর্ক করা হয়েছে। বিকেল থেকেই নষ্ট হয়ে যাওয়া সেতুর বাঁশ বদলানো শুরু করেন
ঘাট কর্তৃপক্ষ।

ঘাটের ইজারাদার রাজশ্রী ঘোষ বলেন, ‘‘ঠাকুরের বড় কাঠামো বা কচুরিপানা ভেসে এসে সেতুর কাঠামোই ভেঙে দেয়। এই কারণেই বাশের রেলিং করা যায় না। তবে জলে নষ্ট হয়ে যাওয়া বাঁশ নিয়মিত বদলে দেওয়া হয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ঘাটের পরিকাঠামো ঢেলে সাজার জন্য আমরা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় আবেদন জানিয়েছি।’’ উত্তরপাড়া, কোন্নগর, রিষড়া, শেওড়াফুলি, চন্দননগর বা চুঁচুড়া বা শ্রীরামপুরের ধোবি ঘাটে ভাসমান জেটি আছে। যাত্রী পরিষেবাও মোটের উপর ভালই। শ্রীরামপুরবাসী চান, রাধাবল্লভ ঘাটেরও হাল ফিরুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন