‘গরিব মায়েদের সিজারটুকু অন্তত হোক’

হাসপাতাল নিয়ে তাঁর তোলা প্রশ্নেই মঙ্গলবার জগৎবল্লভপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার তাল কেটেছিল। তিনি জগৎবল্লভপুরের শঙ্করহাটি-১ পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলেরই সুমিত্রা পণ্ডিত বুধবার আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘সাংসদ, বিধায়ককে বলেও কাজ হয়নি। তাই হাতের কাছে পেয়ে দিদিকেই জগৎবল্লভপুর গ্রামীণ হাসপাতালের উন্নতির জন্য আবেদন জানাতে চেয়েছিলাম। দিদি চিঠি লিখে জানাতে বলেছেন। তা-ই করব।’’

Advertisement

নুরুল আবসার

জগৎবল্লভপুর শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০০
Share:

ব্যস্ত: নিজের কার্যালয়ে সুমিত্রা পণ্ডিত। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতাল নিয়ে তাঁর তোলা প্রশ্নেই মঙ্গলবার জগৎবল্লভপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার তাল কেটেছিল। তিনি জগৎবল্লভপুরের শঙ্করহাটি-১ পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলেরই সুমিত্রা পণ্ডিত বুধবার আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘সাংসদ, বিধায়ককে বলেও কাজ হয়নি। তাই হাতের কাছে পেয়ে দিদিকেই জগৎবল্লভপুর গ্রামীণ হাসপাতালের উন্নতির জন্য আবেদন জানাতে চেয়েছিলাম। দিদি চিঠি লিখে জানাতে বলেছেন। তা-ই করব।’’

Advertisement

জগৎবল্লভপুর এলাকাটি হুগলির শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। এই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এ বারও তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছে। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালের সমস্যা সমাধানের জন্য সাংসদকে জানানোর পরামর্শও দিয়েছিলেন। কিন্তু সুমিত্রার অভিযোগ, সাংসদ-বিধায়ককে বলেও কাজ হয়নি। অভিযোগ মানেননি জগৎবল্লভপুরের তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল গনি। তাঁর দাবি, ‘‘ওই হাসপাতালের উন্নতির জন্য বহুবার স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন করেছি। কাজ হবে।’’ কল্যাণের দাবি, ‘‘ওই মহিলা আমাকে কোনও চিঠি দেননি। হাসপাতাল বা কোনও সমস্যা নিয়ে দলীয় স্তরে বলতে পারতেন। না করে উনি নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। তবে, ওই হাসপাতালের পরিষেবা ভাল। আরও উন্নত করা হবে।’’

জগৎবল্লভপুরের বড়গাছিয়া হাসপাতালের পাশের মাঠে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় হাজির থাকার জন্য সুমিত্রা বিশেষ ‘পাস’ পেয়েছিলেন। ফলে, সামনের সারিতেই বসেছিলেন। তবু মঞ্চ থেকে অন্তত ৩০০ ফুট দূরে। সেই কারণে নিজের দাবি পেশ করতে গিয়ে বেশ চিৎকার করতে হয়েছিল তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রী তখন উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তি শোনাচ্ছিলেন। তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জগৎবল্লভপুর গ্রামীণ হাসপাতাল নিয়ে কিছু বলার জন্য চিৎকার করে অনুরোধ জানান সুমিত্রা। তাঁর দ্বিতীয় বারের চিৎকারে বক্তৃতা থামিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সুমিত্রার প্রশ্নে তিনি দৃশ্যত বিরক্ত হন। বক্তৃতার মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে এসে মুখ্যমন্ত্রী পড়েন সুমিত্রার প্রশ্ন নিয়ে। সাফ জানিয়ে দেন, এই মঞ্চ ওই ধরনের আলোচনার উপযুক্ত জায়গা নয়। তা ছাড়া, প্রতি ব্লকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল করা সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বক্তৃতার শেষে ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি জানান, বিশেষ কোনও সমস্যা থাকলে যেন তাঁকে চিঠি লেখা হয়।

Advertisement

এতেই আশার আলো দেখছেন সুমিত্রা। তিনি বলেন, ‘‘খুব ভয় লেগেছিল। ভেবেছিলাম দিদি রাগ করেছেন। যদিও জানতাম, তিনি রাগ করতে পারেন না। তাঁকে দেখেই আমার রাজনীতিতে আসা। রাজ্যের জন্য তিনি যা করেছেন, তার তুলনা নেই। বোন হিসাবে হাসপাতালের সমস্যা তোলাটা একটা আব্দার ছাড়া কিছু নয়। মানুষের জন্য এই আব্দার করেছি। জানি তিনি উদ্যোগী হলে হাসপাতালের হাল ফিরবে।’’

বছর চল্লিশের সুমিত্রার ধ্যানজ্ঞান রাজনীতি। ২০০৮ সালেও তিনি শঙ্করহাটি-১ পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। দলের অন্দরে সুমিত্রা ‘ডাকাবুকো’ বলে পরিচিত। মোটরবাইক চালিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়ান। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের স্বার্থে কথা বলতে গিয়ে আমি ভয় করি না। হাসপাতালের বেহাল দশার জন্য স্থানীয় মানুষকে কষ্ট পেতে হচ্ছে। এখানে ‘সিজার’ হচ্ছে না। সাধারণ রোগীকেও ‘রেফার’ করা হচ্ছে। গরিব মানুষের এত পয়সা কোথায় যে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে যাবেন?’’

হাসপাতালের বেহাল দশার জন্য মানুষকে অনেক কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে বলেও সুমিত্রার ক্ষোভ। তিনি বলেন, ‘‘দিদি রাজ্যে অনেক কাজ করেছেন। জগৎবল্লভপুরেও তাঁর কাজের শেষ নেই। এ জন্য গর্ব হয়। সামান্য একটা হাসপাতালের জন্য মানুষ কেন কথা শোনাবেন? এতে যে দিদিকে অসম্মান করা হয়। দিদির অসম্মান মানে আমারও অসম্মান। আমরা তো সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চাইনি। চেয়েছি গ্রামীণ হাসপাতালে গরিব মানুষ ন্যূনতম পরিষেবাটুকু পান। গরিব মায়েদের সিজারটুকু অন্তত হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন