ভাড়া নিয়ে ঘাটমালিকের বিরুদ্ধে মারের নালিশ

নৌকার মাসিক ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে নিত্যযাত্রী এবং ঘাট কর্তৃপক্ষের বচসাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের হাতাহাতিতে জখম হলেন কয়েকজন যাত্রী। বুধবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ভদ্রেশ্বরের বাবুঘাটে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০১:৩৩
Share:

হাসপাতালে আহত যাত্রী। — তাপস ঘোষ

নৌকার মাসিক ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে নিত্যযাত্রী এবং ঘাট কর্তৃপক্ষের বচসাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের হাতাহাতিতে জখম হলেন কয়েকজন যাত্রী। বুধবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ভদ্রেশ্বরের বাবুঘাটে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ভদ্রেশ্বর পুরসভার অধীন বাবুঘাট এবং উত্তর ২৪ পরগনার গাড়ুলিয়া ঘাটের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ভুটভুটিতে কয়েকশো যাত্রী পারাপার করেন। ভদ্রেশ্বর পুরসভার মাধ্যমে এই ঘাট টেন্ডারের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হয়। সেইমত বাবুঘাটের দায়িত্ব পান চাঁপদানির বাসি‌ন্দা জিতেন্দ্র সিংহ। যাত্রী ভাড়া বাড়ানো নিয়ে ঘাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভদ্রেশ্বর পুর কতৃর্পক্ষের এক বৈঠক হয় গত বছরের অগষ্ট মাসে। সেইমত গঙ্গা পারাপরের জন্য নৌকার ভাড়া বাড়ানো হয়। সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি উত্তর ২৪পরগনার বাসিন্দা ভদ্রেশ্বর জুটমিলের বহু শ্রমিক পারাপার হন। তাঁদের অভিযোগ, নিত্যযাত্রী হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের কিছু না জানিয়েই সাধারণ ভাড়ার সঙ্গে তাঁদেরও মাসিক ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এই নিয়ে ঘাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বচসা লেগেই ছিল। ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে নিত্যযাত্রীরা ঘাট এলাকায় পোস্টারও লাগিয়েছিলেন। পাশাপাশি ভদ্রেশ্বর পুরসভা থেকে থানা, সবর্ত্রই অভিযোগ জানান তাঁরা। কিন্তু কোনও কিছুতেই কাজ হয়নি। ভাড়া নিয়ে দু’পক্ষের বাদানুবাদ বাড়তেই থাকে।

ঘাট কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্রায় ৮০০ নিত্যযাত্রী ঘাট পারাপার করেন। গত ছয়মাস ধরে তাঁদের মধ্যে তিনশো যাত্রী তাদের মাসিক কার্ড পুনর্নবীকরণ করিয়েছেন। বাকি ৫০০ যাত্রী কার্ড পুনর্নবীকরণ না করে বিনাপয়সায় গঙ্গা পারাপার করছেন। এতে আয় কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন তাঁরা।

Advertisement

বুধবার সকালে ফের এই নিয়ে গোলমাল বাধে। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এ দিন সকালে তাঁরা যখন গাড়ুলিয়া ঘাট থেকে নৌকায় এপারে ভদ্রেশ্বর বাবুঘাটে পৌঁছন তখন ঘাট কর্তৃপক্ষের প্রায় জনা চল্লিশ লোক লাঠি, লোহার রড নিয়ে তাঁদের উপরে হামলা চালায়। মারধর শুরু করে। হামলার মধ্যে পড়ে সাধারণ যাত্রীরাও আহত হন। এ দিন সকালে কাজে যোগ দিতে আসা গাড়ুলিয়ার বাসিন্দা ভদ্রেশ্বরের শ্যামনগর জুটমিলের শ্রমিক পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘাটে উঠতে গেলে হামলাকারীদের রডের আঘাতে আমার মাথা ফেটে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবস্থা সামাল দেয়।’’ গুরুতর জখম পার্থবাবুকে চিকিৎসার জন্য চন্দননগর হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সমস্ত শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দিয়ে ভদ্রেশ্বর থানায় ঘাট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।

আহত নিত্যযাত্রী জুটমিল শ্রমিক পার্থ বন্ধ্যোপাধ্যায় জানান, ঘাট কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ভদ্রেশ্বর পুরসভার সঙ্গে বৈঠক করে মাসিক ভাড়া বাড়িয়েছে। তাঁরা পুরসভা, থানা ও জেলা প্রশাসনের কাছে জানানো সত্ত্বেও কোনও ফল হয়নি। এদিন সকালে কাজে যোগ দিতে আসার সময় ঘাট কর্তৃপক্ষের ৪০-৫০ জন লোক তাঁদের উপর হামলা চালায়।

ঘাট কর্তৃপক্ষের তরফে জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘গত ছ’মাস ধরে নিত্যযাত্রীদের একাংশ ঘাট পারাপারের জন্য কার্ড পুনর্নবীকরণ না করে বিনা ভাড়ায় যাতায়াত করছেন। তাতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছিল। এদিন তাই নিয়ে বচসা বাধলে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা থেকে হাতাহাতি বেধে যায়।’’ ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি। তবে মারপিঠ করা উচিত হয়নি। এতে প্রশাসন যা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেবে। তবে যাত্রীদের সঙ্গে সুষ্ঠু আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন