শিল্পে আঁধার

ডোমজুড়ে প্রস্তাবিত রবার পার্ক সেই তিমিরেই

বন্ধ ডানলপ, হিন্দুস্তান মোটরস, ফোর্ট গ্লস্টার, বাউড়িয়া কটন মিলের মতো অনেক কারখানা। দুই জেলাতেই এক সময়ে বড়-মাঝারি এবং ছোট শিল্পের রমরমা ছিল। বহু কুটির শিল্প এখন ধুঁকছে। রাজ্যে পালাবদলের সাত বছর পরেও হাল ফেরেনি শিল্পের এই মলিন চেহারাটার। কেন? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অল ইন্ডিয়া রবার ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন ওই পার্ক তৈরির পরিকল্পনা করে। প্রকল্পের জন্য মোট ৯২ একর জমি সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ১৮ একর জমি শিল্পোন্নয়ন নিগম অধিগ্রহণ করে নেয়।

Advertisement

নুরুল আবসার

ডোমজুড় শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:৩০
Share:

সুনসান: ফাঁকাই পড়ে প্রস্তাবিত জমি। নিজস্ব চিত্র

পরিকল্পনা বিস্তর। কথা ছিল, এখানে গড়ে উঠবে একের পর এক রবার ও প্লাস্টিকের কারখানা। রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম ৩ কোটি টাকা দিয়েছে পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য। কেন্দ্রীয় সরকারের বাণিজ্য দফতর দিয়েছে ১৫ কোটি টাকা। কিন্তু এক দশক পেরিয়ে গেলেও হাওড়ার ডোমজুড়ে প্রস্তাবিত রবার পার্কের পরিকল্পনা সেই তিমিরেই। কারখানা হয়নি। কর্মসংস্থানও বিশ বাঁও জলে।

Advertisement

কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অল ইন্ডিয়া রবার ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন ওই পার্ক তৈরির পরিকল্পনা করে। প্রকল্পের জন্য মোট ৯২ একর জমি সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ১৮ একর জমি শিল্পোন্নয়ন নিগম অধিগ্রহণ করে নেয়। বাকি জমি সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে কেনা হয়। যেহেতু শিল্প হবে, তাই সরাসরি জমি কেনার সময়ে ৫০ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ কর ছাড় দেয় রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য দফতর এবং রাজ্য শিল্পন্নয়ন নিগম আর্থিক সহায়তা দেয় জমির উন্নয়ন, রাস্তা, জল, নিকাশির ব্যবস্থা করার কথা।

কথা ছিল এখানে অন্তত ৩০০ প্লাস্টিক ও রবার কারখানা হবে। ব্যবসায়ীরা জমি লিজ নিয়ে কারখানা তৈরি করবেন। অন্তত ২০ হাজার শ্রমিক কাজ পাবেন। পরোক্ষভাবে সমসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ২০১২ সালের মধ্যে ৭২ একর জমিতে প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল।

Advertisement

বাস্তবে কিছুই হয়নি। পাঁচিল দিয়ে কিছুটা জমি ঘেরা হয়। ভিতরে কিছুটা অংশে পিচের রাস্তা তৈরি হয়। কিন্তু জমি ধুধু করছে। আগাছায় ভরেছে এলাকা। সাকুল্যে তিনটি কারখানা তৈরি হয়েছে। যদিও উৎপাদন‌ চালু হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের রবার গবেষণা সংক্রান্ত একটি সংস্থা সপ্তাহখানেক আগে অফিস উদ্বোধন করেছে। তারাও কাজ শুরু করেনি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকায় শিল্পের স্বার্থে অনেকে কম দামে জমি দিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কারখানা চালু হলে স্থানীয় বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে তাঁরাও হতাশ।

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য দফতর এবং রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের তরফে বারবার অল ইন্ডিয়া রবার ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিসেশনকে বলা হয়েছে দ্রুত পার্ক চালু করার জন্য। ২০১১ সালে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পার্ক পরিদর্শন করতে এসে দ্রুত চালুর কথা বলেন। বছর দু’য়েক আগে শিল্প ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিও পার্ক পরিদর্শন করে। তারাও পার্ক চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাছে আবেদন জানায়। কিন্তু কোনও কিছুতেই পরিস্থিতির হেরফের হয়নি। ।

কেন চালু হচ্ছে না পার্ক?

স্থানীয় সূত্র এবং শিল্পন্নয়ন নিগমের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এখানে কারখানা করতে অনেকে আগ্রহ দেখাননি। সেই কারণেই এই পরিস্থিতি। ফলে, পরিকল্পনা মাটি হতে বসেছে।

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এবং অল ইন্ডিয়া রবার ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের নিয়ে তৈরি কমিটি পার্কটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছে। কমিটির সদস্য তথা রবার ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্তার অবশ্য দাবি, ‘‘খুব শীঘ্রই পার্কটি চালু হবে। কারখানা করার জন্য ৫০টি সংস্থা জমি নিয়েছে। আরও অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ফলে কোনও সমস্যা হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন