Coronavirus in Howrah and Hooghly

সংক্রমিতের বাড়ির জঞ্জাল সংগ্রহে প্রশ্ন

হুগলির বিভিন্ন পুর এলাকায় করোনা-আক্রান্তের বাড়ির বর্জ্য কি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সংগ্রহ হচ্ছে?

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রকাশ পাল

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ০৭:২৪
Share:

সংক্রমিতের বাড়ি থেকে এ ভাবেই সংগৃহীত হচ্ছে বর্জ্য। চুঁচুড়ায়। নিজস্ব িচত্র

রোগটা ছোঁয়াচে। সংক্রমণের হার লাফিয়ে বাড়ছে। সংক্রমিতের বাড়ির বর্জ্য থেকেও রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকছে। কিন্তু হুগলির বিভিন্ন পুর এলাকায় করোনা-আক্রান্তের বাড়ির বর্জ্য কি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সংগ্রহ হচ্ছে? বেশ কিছু ঘটনায় এ প্রশ্ন সামনে আসছে।

Advertisement

ঘটনা-১: সম্প্রতি চুঁচুড়ায় এক দম্পতি সংক্রমিত হন। অভিযোগ, তাঁদের বাড়ি থেকে বেশ কয়েক দিন জঞ্জাল সংগ্রহ করা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করার পরে পুরসভা ওই বাড়ি থেকে জঞ্জাল নিয়ে যায়।

ঘটনা-২: কিছুদিন আগে উত্তরপাড়ার মাখলায় পুরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প এলাকার সামনে স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, মাটির তলায় সংক্রমিতদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকে পিপিই গর্ত করে পোঁতা হচ্ছে। কিন্তু গর্তের গভীরতা কম হওয়ায় কুকুর মাটি সরিয়ে মুখে করে তা বের করে ছড়াচ্ছে। তাতে সংক্রমণের ভয় বাড়ছে।

Advertisement

ঘটনা-৩: চন্দননগরের বড়বাজারের এক মহিলা সংক্রমিত হয়েছেন। বাড়ির বর্জ্য কয়েকদিন জমিয়ে রাখার পরে সোমবার তাঁর যুবক ছেলে পুরসভার হাতগাড়িতে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘‘সকলের বাড়ি থেকে যে গাড়িতে জঞ্জাল সংগ্রহ করা হয়, তাতে আমাদের বর্জ্য ফেলতে চাইছিলাম না। ভয় লাগছিল। সাফাইকর্মীর কথামতো শেষে বাধ্য হয়ে ফেললাম।’’ একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সংক্রমিতের বাড়ির আবর্জনা কি আলাদা করে সংগ্রহ করা উচিত নয়? সাফাইকর্মী তো শুধু মাস্ক পরে আসেন।’’

স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা বলছে, বর্জ্য রাখার জন্য সংক্রমিতের বাড়িতে হলুদ রঙের ঢাকা দেওয়া পাত্র সরবরাহ করতে হবে পুরসভাকে। সাফাইকর্মীদের আলাদা দল পিপিই পরে ওই বাড়িতে গিয়ে ভিন্ন গাড়িতে বর্জ্য সংগ্রহ করবেন। নির্দিষ্ট জায়গায় অন্তত ছ’ফুট গর্ত করে তা মাটি চাপা দিতে হবে। যে সব পুরসভায় কোনও সংস্থার মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়, সেখানে ওই বর্জ্য তাদের দিতে হবে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই নির্দেশিকা মেনে বর্জ্য সরানো হলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকার কথা নয়।’’

কিন্তু তা কি হচ্ছে? করোনা সংক্রমিত অনেকেই থাকছেন গৃহ-নিভৃতবাসে। সেই সব পরিবারের বর্জ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পদ্ধতি মেনে হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। অনেকেরই অভিযোগ, পিপিই না-পরেই পুরকর্মীরা সংক্রমিতের বাড়ি থেকে আবর্জনা নিয়ে যাচ্ছেন। কোনও ক্ষেত্রে পাড়ার অন্য পরিবারের আবর্জনার সঙ্গে একই গাড়িতে সংক্রমিতের বাড়ির জঞ্জাল নেওয়া হচ্ছে।

বিভিন্ন পুর-কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, স্বাস্থ্য দফতরের বিধি মেনেই সংক্রমিতের বাড়ির আবর্জনা সংগ্রহ এবং তা নষ্ট করা হচ্ছে। মাখলার ঘটনার ক্ষেত্রে স্থানীয় বিদায়ী কাউন্সিলর ইন্দ্রজিৎ ঘোষের দাবি, ‘‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় গর্ত খোঁড়ার যন্ত্র ভিতরে ঢুকতে না-পারাতেই ওই সমস্যা হয়েছিল। আমরা সতর্ক। অযথা আতঙ্কের কারণ নেই।’’ কোন্নগরের পুর-প্রশাসক বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় এবং রিষড়ার পুর-প্রশাসক বিজয়সাগর মিশ্র সংক্রমিতদের বাড়ির আবর্জনা নিয়ে সতর্কতার কথা শুনিয়েছেন।

আরামবাগের পুর প্রশাসক স্বপন নন্দী বলেন, ‘‘গৃহ-নিভৃতবাসে থাকা করোনা রোগীর বাড়ির বর্জ্য নির্দিষ্ট এজেন্সি নিয়ে যায়।’’ চুঁচুড়ার পুর-প্রশাসক গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘সাফাইকর্মীরা পিপিই পরে আলাদা গাড়িতে করোনা রোগীদের বর্জ্য এক জোড়া প্লাস্টিকে মুড়ে সংগ্রহ করেন। সেই বর্জ্য জেলা সদর হাসপাতাল থেকে নির্দিষ্ট সংস্থা নিয়ে যায়।’’ চন্দননগরের পুর কমিশনার স্বপন কুণ্ডুর দাবি, ‘‘সংক্রমিতের বাড়িতে জীবাণুনাশক দেওয়া বিশেষ প্লাস্টিক ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে। পুরকর্মীরা পিপিই পরে তা সংগ্রহ করেন।’’

বিভিন্ন পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি অবশ্য সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে অভিযোগ। চন্দননগরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পরিবেশ অ্যাকাডেমি’র কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোভিড-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। ঠিকঠাক ভাবে এই কাজ হচ্ছে কিনা, তা দেখতে মহকুমা, জেলা এবং রাজ্যস্তরে তদারকি কমিটি গড়া দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন